শেখ শাফায়াত হোসেন: গ্রামীণফোনের ডিজিটাল ওয়ালেট জিপে’কে ব্যবসা করতে হলে আলাদা কোম্পানি গঠন করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) অথবা পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) হিসেবে নিবন্ধন নিতে হবে। আর এজন্য ছয় মাস সময় দিয়ে গত ১ অক্টোবর গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ।
জানা গেছে, ২০১০ সালের মার্চে গ্রামীণফোনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মোবিক্যাশ’ ব্র্যান্ডের আওতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইলেকট্রনিক টিকিট বিক্রির অনাপত্তি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সাতটি শর্তে দেওয়া ওই অনাপত্তিপত্রের ৬ নম্বর শর্তে মোবিক্যাশের আওতায় নতুন কোনো সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে বলা হয়।
২০১২ সালে গ্রামীণফোন জিপে অ্যাপের মাধ্যমে মোবিক্যাশ ব্র্যান্ড নামের আওতায় ইউটিলিটি বিল কালেকশন সেবা চালুর বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। তখনও ওই শর্ত জুড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই শর্ত ভঙ্গ করে গ্রামীণফোন কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই জিপে’র মাধ্যমে ই-ওয়ালেট সেবা দেওয়া শুরু করে ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে। তবে গত বছর জিপে’র প্রচারণা থেকে বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ ডিসেম্বর গ্রামীণফোনের এমডি ও সিইও বরাবর চিঠি দিয়ে ই-ওয়ালেট সেবা বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
গ্রামীণফোনের এমডিকে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জিপে ওয়ালেট সেবার বিষয়ে আপনাদের প্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশনস ২০১৪-এর ৫(১) অনুযায়ী এ ধরনের ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) লাইসেন্স নেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে।’
এ অবস্থায় জিপে ব্র্যান্ডের আওতায় প্রদত্ত গ্রামীণফোনের অননুমোদিত আর্থিক সেবা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ওই নির্দেশনা অমান্য করায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
যদিও ওই নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রামীণফোনের হাতে পৌঁছানো হয়নি বলে দাবি করেছিল অপারেটরটি। গত ফেব্রুয়ারিতে শেয়ার বিজের পক্ষ থেকে গ্রামীণফোনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির গণসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে গত ১ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে জিপে’র ব্যবসা করার জন্য আলাদা কোম্পানি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং পিএসপি বা পিএসও হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা করার কথা বলা হয়। এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে গতকাল প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পাশাপাশি গ্রামীণফোনের জনসংযোগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ফোরথট পিআর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ নিয়ে গ্রামীণফোনের কোনো জবাব দিতে পারেনি ওই পিআর প্রতিষ্ঠানটিও। গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকেও কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।