কোরআন তিলাওয়াত করা অতি পুণ্যের কাজ

হাফেজ মাওলানা নাসির উদ্দিন: সারা বছর যে পরিমাণ কোরআন তিলাওয়াত হয়, তার চেয়ে বহুগুণ তিলাওয়াত হয় পবিত্র রমজান মাসে। এ মাসের রাতগুলোতে তারাবির নামাজ এবং তারাবির নামাজে কোরআন তিলাওয়াত বিধিবদ্ধ হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়ি ও সব যুগের পুণ্যাত্মারা এই পবিত্র মাসে তুলনামূলক অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াতে যত্নবান হয়েছেন। এমনকি মুসলিম উম্মাহর পুণ্যবান রমণীদের জীবনীতেও পাওয়া যায়, তাঁরাও এ মাসে তিলাওয়াতের ব্যাপারে কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলেন না। সংসারের শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁরা এ মোবারক মাসে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে যত্নবান ছিলেন। এ ব্যাপারে প্রচুর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। এখানে ছোট একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো। শাইখুল হাদিস জাকারিয়া কান্দলোভী (রহ.) রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াত প্রসঙ্গে তাঁর কন্যাদের কথা আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, আমি ফাজায়েলে রমজানের একাধিক স্থানে এবং ফাজায়েলে কোরআনেও এ বিষয়টি দেখেছি, আমাদের পরিবারের মহিলাদের মধ্যে বিশেষ করে আমার কন্যারা সন্তান-সন্ততি ও সংসারের নানা ঝামেলা সত্ত্বেও এই মোবারকময় রাতগুলো বিভিন্ন (মাহরাম) হাফেজে কোরআনের পেছনে নামাজে কাটিয়ে থাকেন এবং দিনের বেলা কমপক্ষে ১৪-১৫ পারা কোরআন তিলাওয়াত করেন। তাদের মধ্যে এ বিষয়ে
প্রতিযোগিতা চলতে থাকে যে, কে কত বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন। (আকাবিরদের রমজান, ৬৩-৬৪)
অতএব, আমাদের প্রত্যেকের উচিত রমজানে অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা। অন্ততপক্ষে একবার হলেও এ মাসে কোরআন শরিফ খতম করা। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়ি ও সালফে সালেহিনের জীবনী আলোচনা করলে দেখা যায়, তাঁরা এবং পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে রমজানে বহুবার কোরআন মাজিদ খতম করতেন। তাই আসুন আমরা সবাই এই পবিত্র রমজান মাসে বেশি বেশি তিলাওয়াত করি এবং আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হাসিল করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন এবং আমাদের তিলাওয়াতের উছিলায় আমাদের নাজাতের ব্যবস্থা করুক। (আমিন)
রোজার নিয়ত সম্পর্কিত মাসালা: রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন মনে মনে এ সংকল্প করবে যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/১৯৫)।

বরকতময় সাহরি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি হলো পবিত্র রমজানের রোজা। আর রোজার পাঁচটি সুন্নতের প্রথমটি হলো সাহরি বা ভোররাতের খাবার গ্রহণ করা। মধ্যরাতের পর থেকে সুবহে সাদিক তথা ফজর ওয়াক্তের আগের সময়টাকে সাহরি বলা হয়। সাহরি বিলম্বে খাওয়া সুন্নত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না। তার আগেই সাহরি নিরাপদ সময়সীমার মধ্যে শেষ করতে হবে। শেষ সময়ে সাহরি করলে নবীজীর সুন্নত যেমন আদায় হয়, তেমনি রোজা রাখাও সহজ হয়। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস ১৮০১ ও মুসলিম শরিফ, ১০৯৫/৪৫)
অন্য এক হাদিসে আছে, ‘সাহরি খাওয়া বরকতপূর্র্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা ছেড়ে দিও না, যদিও তা এক ঢোক পানি দিয়ে হোক না কেন। কারণ যারা সাহরি খায়, আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেস্তাগণ তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস-১০৭০২)
হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের (মুসলমানদের) রোজা আর আহলে কিতাবদের (ইহুদি-খ্রিষ্টান) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো, সাহরি খাওয়া আর না খাওয়া। (মুসলিম শরিফ, পৃষ্ঠা ১৩১)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরি খাও, যদি তা এক ঢোক পানিও হয়। অন্যত্র বলেছেন, তোমরা সাহরি খাও, যদি এক লোকমা খাদ্যও হয়। উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা সাহরির গুরুত্ব বোঝা যায়। এক ঢোক পানি, এক লোকমা খাদ্য, এক কাপ দুধ, সামান্য ফলমূল বা একটি খেজুরের মতো সামান্য হলেও সাহরি গ্রহণ করা সুন্নত।