মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। আর এর মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাটাগরি পরিবর্তনের প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে। এর জেরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মুন্নু সিরামিক, ম্যাকসন্স স্পিনিং, দেশবন্ধু পলিমার ও আজিজ পাইপস।
এদিকে ক্যাটাগরি পরির্তনের খবরে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে ‘বি’ বা ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আসা কিংবা ‘বি’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরে আসা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সংবেদনশীল তথ্য। এমন তথ্যের ওপর নির্ভর করে শেয়ারের দর বৃদ্ধি পাওয়া কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, সাধারণত প্রতিষ্ঠান মুনাফা করলে ভালো কোনো সংবাদ থাকলে তখন শেয়ারহোল্ডারদের সন্তোষজনক রিটার্ন দিতে চায় কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের খবরে শেয়ারের দর বৃদ্ধি পাওয়া যৌক্তিক।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সিরামিক খাতের প্রতিষ্ঠান মুন্নু সিরামিক এ বছর ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে। এটি অনুমোদন পেলে প্রতিষ্ঠানটি ‘বি’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে। এর আগে পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।
বস্ত্র খাতের ম্যাকসন্স স্পিনিং সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করে ‘জেড’ থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আসছে।
একইভাবে আজিজ পাইপস ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আসার জন্য পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক সাধারণ সভায় বিষয়টি পাস হলেই ক্যাটাগরি পরিবর্তন হয়ে যাবে।
এদিকে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের খবরে ম্যাকসন স্পিনিং ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ খবরে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ৭২ টাকার মুন্নু সিরামিক ১০৯ টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে। দর বেড়েছে দেশবন্ধু পলিমালের শেয়ারেরও। ক্যাটাগরি পরিবর্তনের খবরে ১৯ টাকার শেয়ার বর্তমানে ২১ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। আর ১২২ টাকার আজিজ পাইপসের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১২৫ টাকায়। অন্যদিকে কিছুদিন আগে ফেসভ্যালুর নিচে থাকা ম্যাকসন স্পিনিং বর্তমানে ১০ টাকায় হাতবদল হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে দেশবন্ধু পলিমারের সহকারী ব্যবস্থাপক মামুন হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, শেয়ারের দর হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে বাজারে শেয়ারের চাহিদা কেমন তার ওপর। এটা কোম্পানির কেউ বলতে পারে না। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে, হয়তো সে কারণে শেয়ারের দর বাড়তে পারে।
তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুন্নু সিরামিক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৩ সালে। এ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ারের মধ্যে ৬১ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের কাছে। ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে আছে শূন্য দশমিক শূন্য চার শতাংশ শেয়ার। অন্য প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু পলিমার পুঁজিবাজারে আসে ২০১১ সালে। এ প্রতিষ্ঠানের ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী, ৩৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরিচালক এবং আট দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
এছাড়া ম্যাকসন স্পিনিং পুঁজিবাজারে আসে ২০০৯ সালে। প্রতিষ্ঠানটির ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাকি শেয়ারের মধ্যে পরিচালকরা ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। অন্য কোম্পানি আজিজ পাইপস বাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। এ প্রতিষ্ঠানের ৫৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া ৩৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার পরিচালক এবং পাঁচ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।