পাঠকের চিঠি

ক্যাম্পাস হোক নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব

বিশ্ববিদ্যালয় হবে নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব, থাকবে না কোলাহল, যানবাহনের ঝঞ্ঝাট কিংবা বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ এমনটাই কাম্য। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকা একান্তই জরুরি।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাড়ি দুর্ঘটনায় এক নারীর মৃত্যুই স্মরণ করিয়ে দেয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ কতটা অবনতির পথে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে কয়েকটা বড় বড় সড়ক। প্রতিদিন হাজারো যানবাহনের চলাচল এ সড়ক ধরেই। নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো চেকপোস্ট কিংবা ট্রাফিক পুলিশ, নেই জেব্রা ক্রসিং। দোয়েল চত্বর ও রাজু ভাস্কর্যের সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী তাদের জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়েই পার হচ্ছে এসব সড়কপথ। ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে যানবাহনের এমন চলাচল শিক্ষার্থীদের জীবন নাশের সম্ভাবব্যতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো শিক্ষার্থী গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।

প্রতিদিন হাজারো বহিরাগত এসে ভিড় জমান কার্জন হল প্রাঙ্গণ, টিএসসি কিংবা কলাভবনে। কারও কারও ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ে সয়লাব হয়ে যায় ঢাবি ক্যাম্পাস। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন বিকালে বহিরাগতরা  ফটোশুট ও টিকটক ভিডিও তৈরিতে এমনভাবে মেতে ওঠেন যেন এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হিসেবে আখ্যায়িত না করে বরং রম্য পার্ক কিংবা স্টুডিও হিসেবে আখ্যায়িত করাটাই শ্রেয়।

বহিরাগতদের বিভিন্ন অপকর্ম ও তাদের দ্বারা শিক্ষার্থীরা বাজে ব্যবহার এবং মেয়ে শিক্ষার্থীরা যৌন নিপড়নের শিকারের ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ।

শতবর্ষ শেষেও দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের ক্যাম্পাসের এত বেহাল! এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে সব রকম ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার এবং ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করা। বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ বন্ধ কর। তবে এদেশের মানুষ যাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে কাছ থেকে দেখতে পারে, ছোট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে কোনো বাবা যেন ক্যাম্পাসে এসে তার সন্তানকে বলতে পারে তুমিও একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, সেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনসাধারণকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। ঢাবির প্রক্টোরিয়াল টিমকে আরও বেশি দায়িত্ববান হওয়া উচিত।

শতবর্ষী একটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল, বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ সত্যিই এ জাতির জন্য কষ্টের বিষয়। যদি এসব বন্ধ না করে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা না হয়, তবে তা শিক্ষার্থী ও এ জাতির জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না। তাই সমস্যা সমাধানে সরকার, ঢাবি প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসা উচিত। সবার সম্মলিত প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাস হয়ে উঠুক নিরাপদ, ফিরে আসুক পড়ালেখার নমনীয় পরিবেশ।

মাহতাপ ইসলাম

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়