ক্যাসিনোর কালোটাকার সন্ধান করা হচ্ছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

# ক্যাসিনো কানেকশনে ২০ জনের ব্যাংক হিসাব তলব
# আরও ১০-১২ জনের তথ্য যাচাই শেষে তলব করা হবে
# ক্যাসিনো পণ্য খালাস না দিতে কাস্টমস হাউসকে নির্দেশ
# ক্যাসিনো সামগ্রীকে নিষিদ্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে এনবিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক: সংবিধানে জুয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু আমদানি নীতি অনুযায়ী জুয়ার সামগ্রী আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য নয়। সে জন্য কখনও ঘোষণা দিয়ে আবার কখনও মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি হয়েছে ক্যাসিনোর নামে জুয়ার সামগ্রী। তবে ক্যাসিনোর সামগ্রী কীভাবে দেশে আমদানি হয়েছে এমন প্রশ্ন উঠার পর সব কাস্টম হাউসকে ক্যাসিনোর সামগ্রী আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া ক্যাসিনোর নামে কালোটাকা ছড়াছড়ি হয়েছে এবং টাকা পাচার হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে এনবিআর। সেই কালোটাকার সন্ধানে নেমেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসব কথা বলেন। গতকাল সেগুনবাগিচায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক যেসব কর্মকাণ্ড বেরিয়ে আসছে এটা শুধু ক্যাসিনোতে যে শুধু জুয়া খেলা চলত তা না। এখন শোনা যাচ্ছে ক্যাসিনোতে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ক্যাসিনোর ভেতর দিয়ে হতো। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব হতো। দেশে ১৯৭৩ সাল থেকে মদ এবং জুয়া নিষিদ্ধ। পরবর্তীতে মদ সীমিত আকারে বিদেশিদের জন্য বৈধ করা হয়েছে। কিন্তু জুয়া চালু করা হয়নি। এখন আলোচনা হচ্ছে, ক্যাসিনো সামগ্রী আমদানি নীতিতে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু যারা আমদানি নীতি প্রণয়ন করে তাদের মাথায় ক্যাসিনোর ধারণা আসেনি। আমদানি নীতিতে আছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এ ধরনের কোনো দ্রব্যাদি আমদানি করা যাবে না। সাংবিধানিকভাবে দেশে জুয়া নিষিদ্ধ। সে অনুযায়ী ক্যাসিনোর জিনিস না আনার কথা। আমদানি নীতিতে নেই কিন্তু এসব পণ্য খালাস হলো কীভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে।

ক্যাসিনোতে কালোটাকার ছড়াছড়ি আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, জুয়া খেলা অবৈধ সে জন্য ক্যাসিনো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখন ক্যাসিনোর সঙ্গে কালোটাকার একটা সম্পর্ক বের হয়ে আসছে। ক্যাসিনোতে অভিযানে জুয়ার আসর থেকে বহু লোক ও কোটি কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, এতে কালোটাকার ছড়াছড়ি আছে। অর্থ যে বিদেশে পাচার করে নাই সেটাও বলা যাবে না। সে জন্য এনবিআর থেকে আমরা একটু নড়েচড়ে বসেছি। দেখি, সন্ধান করে এ কালোটাকাগুলো পাই কি না।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজনের মায়ের নামে প্রচুর সঞ্চয়পত্র পাওয়া গেছে। একইভাবে অন্যদের কোনো কোনো পরিবারের সদস্যদের নামে সঞ্চয়পত্র বা এ ধরনের কিছু আছে। এ পর্যন্ত আমরা ব্যক্তি আটজনের ব্যাংক হিসাব সার্চ (তল্লাশি) দিয়েছি। এর মধ্যে ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মচারী রয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যসহ ২০ জনের মতো ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধান করছি। দু’চারজন ছাড়া অধিকাংশের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ বা জব্দ করা হয়েছে। কিছু কিছু লেনদেন বন্ধ করা হয়নি, তবে সেসব হিসাবে কারা, কত টাকা লেনদেন করেছে তার তথ্য চেয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা কালোটাকার সন্ধান করছি। তিনি আরও বলেন, ২০ জনের বাইরেও আরও ১০-১২ জন সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। তাদের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। তথ্য পাওয়া গেলে ব্যাংক হিসাব তলব করা হবে। এদের অর্থ পাচার ও করফাঁকি দুটো অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজনের মায়ের নামে প্রচুর সঞ্চয়পত্র পাওয়া গেছে। একইভাবে অন্যদের কোনো কোনো পরিবারের সদস্যদের নামে সঞ্চয়পত্র বা এ ধরনের কিছু আছে। এ পর্যন্ত আমরা ব্যক্তি আটজনের ব্যাংক হিসাব সার্চ (তল্লাশি) দিয়েছি। এর মধ্যে ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মচারী রয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যসহ ২০ জনের মতো ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধান করছি। দু’চারজন ছাড়া অধিকাংশের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ বা জব্দ করা হয়েছে। কিছু কিছু লেনদেন বন্ধ করা হয়নি, তবে সেসব হিসাবে কারা, কত টাকা লেনদেন করেছে তার তথ্য চেয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা কালোটাকার সন্ধান করছি। তিনি আরও বলেন, ২০ জনের বাইরেও আরও ১০-১২ জন সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। তাদের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। তথ্য পাওয়া গেলে ব্যাংক হিসাব তলব করা হবে। এদের অর্থ পাচার ও করফাঁকি দুটো অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ রয়েছে।

অনুসন্ধানে সব সব কালোটাকা আসে না স্বীকার করে বলেন, অনেকেই কালোটাকা ঘোষণা দিয়ে ঝামেলায় যেতে চাই না। তবে এনবিআরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যদি কেউ কালোটাকা ঘোষণা দেয়। আমরা যদি নির্ধারিত পরিমাণ ট্যাক্স নিয়ে তাকে ছাড় দেয় দুদক তাকে আর আটকাতে পারবে না। অনেকেই এ সুযোগ গ্রহণ করছে, অনেকেই গ্রহণ করছে না ঝামেলার ভয়ে। অথবা সে সেচ্ছায় চাচ্ছে না যে তার গোপন টাকার খবর মানুষ জানুক। অনেকে দেশের বাইরে কায়দা করে নিয়ে যায়। যাদের দেশের প্রতি টান নেই।চেয়ারম্যান বলেন, ক্যাসিনোর নামে এখন যে টাকা বের হচ্ছে সেগুলো যদি সঠিক উৎস দেখাতে না পারে তাহলে সব টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। ট্যাক্স দিয়েও এ টাকা রক্ষা করার উপায় থাকবে না। আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে বিধায় ক্যাসিনো বা জুয়ার সামগ্রী আর আসবে না। বিগত ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত জুয়ার সামগ্রী আমদানি হয়েছে কি না কাস্টমস গোয়েন্দা অনুসন্ধান করছে। কিছু কিছু জায়গায় পাওয়া গিয়েছে যে ক্যাসিনোর নামেই আসছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে খেলার সামগ্রী ঘোষণা দিয়ে আসছে। তবে অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে এক সঙ্গে ক্যাসিনোর সামগ্রী আনা হয়। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সঙ্গে আমদানি করেছে। ধরপাকড় শুরুর পর কাস্টম হাউসকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে ক্যাসিনোর সামগ্রী দেখা হয়।

ক্যাসিনো পণ্যকে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ক্যাসিনো পণ্যকে অন্তর্ভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সপ্তাহের মধ্যেই বাণিজ্য সচিবকে ক্যাসিনোতে ব্যবহƒত পণ্যকে আইপিওতে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চিঠি দেব। আমরা ভাবিনি যে আমাদের দেশে ক্যাসিনো চালু হবে।