Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 10:31 pm

ক্রীড়াঙ্গনে অদম্য বাংলার নারীরা

ইমাম হোসেন: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় নারীর কথা এভাবে তুলে ধরেছেন‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর/ বিশ্বে যা-কিছু এলো পাপ-তাপ-বেদনা-অশ্রুবারি/ অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।’ সম্প্রতি নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশের মেয়েরা। ১৯ সেপ্টেম্বর ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা আসে বাংলাদেশের ঘরে।

খেলাধুলায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার মেয়েদের খেলাধুলার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অতি সম্প্রতি ইউনিসেফ ও বাফুফে (১২-১৬ বছর বয়সী মেয়েদের) দেশব্যাপী ফুটবল প্রতিভা অন্বেষণের কার্যক্রম শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, এ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে বসবাস করা মেয়েরা উঠে আসবে।

বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, শুরুতে নারী খেলোয়াড়দের পদচারণা খুব একটা ভালো ছিল না। যারা শুরুর দিকে এসেছেন, তারা নিজে থেকে এসেছেন এবং খোলামনে বাংলাদেশের খেলাধুলার জগতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এ দেশের মহিলা খেলোয়াড়দের নিয়ম বিশ্ব খেলাধুলা নিয়মের তুলনায় অবহেলিত। অবহেলার মূল কারণ পরিবার, সমাজ, ধর্ম, অর্থনৈতিক নির্ভরতা, জীবনযাপনের বৈচিত্র্য এবং নারী অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকা। বাংলাদেশে খেলাধুলার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, শুরুতে নারী খেলোয়াড়দের পদচারণা খুব একটা ভালো ছিল না। যারা শুরুর দিকে এসেছেন, তারা নিজে থেকে এসেছেন এবং খোলামনে বাংলাদেশের খেলাধুলার জগতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এ দেশের নারী খেলোয়াড়রা নিয়মনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অবহেলিত। অবহেলার মূল কারণ পরিবার, সমাজ, ধর্ম, অর্থনৈতিক নির্ভরতা, জীবনযাপনের বৈচিত্র্য এবং নারী অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকা।

আমাদের দেশের মেয়েদের এখনও খেলাধুলায় সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে বৈষম্য। যেখানে ছেলেদের প্রায় সব টুর্নামেন্টে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়, মেয়েদের ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় না বললেই চলে। এর বাইরে পারিবারিক অনীহা ও নিরাপত্তাহীনতার জন্যও আমাদের মেয়েদের খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরপরও খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নারীরা। কয়েক বছর ধরে খেলাধুলায় আমাদের মেয়েরা ভালো করছে। তার অর্থ মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো প্রতিকূলতাই যেন দমিয়ে রাখতে পারেনি এদেশের নারী খেলোয়াড়দের। একের পর এক সাফল্য তাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেমসেও নারীরা পুরুষদের সমানই পদক জয়ের নজির রাখছে।

বাংলাদেশে এমনিতেই খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক কম থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফুটবলে মেয়েদের ব্যাপকভাবে আগ্রহ বাড়ছে। এর মধ্যে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, ফুটবলে শুরু থেকেই দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি দেখা গেছে।

শত প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূলতা ও বৈষম্য পেরিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নারীরা। তাদের মাধ্যমেই দেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়–ক সারা বিশ্বে। আরও এমন অনেক সাফল্য নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে এগিয়ে যাবে আমাদের নারীরাÑএমন প্রত্যাশা সব সময়।

গণমাধ্যমকর্মী

মীরসরাই, চট্টগ্রাম

পাঠকের চিঠি