মো. আসাদুজ্জামান নূর: চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পতনের পরে গতকাল আবার উত্থান হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। আগের দিনের তুলনায় শেয়ার কেনায় আগ্রহী ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া সিংহভাগ সিকিউরিটিজের দর বেড়েছে। এ কারণে সূচক ও টাকার অঙ্কে লেনদেন বেড়েছে।
গত বছর শেষ কার্যদিবসে ও নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে টানা সূচক বেড়ে লেনদেন হয় পুঁজিবাজারে। আশা করা হচ্ছিল, চার মাসের দর সংশোধন শেষে এবার পুঁজিবাজারের উত্থানের পর্ব শুরু। কিন্তু টানা ছয় দিন উত্থানের পর গত রোববার পতন দেখেন বিনিয়োগকারীরা। অনেকে এ পতনকে কভিড-১৯-এর তৃতীয় ঢেউ ও ওমিক্রন ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাজনিত প্রভাব বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে ছয় দিন পর এক দিন দরপতন স্বাভাবিক দর সংশোধন হিসেবে উল্লেখ করেন অনেকে। এ পরিস্থিতিতে গতকালের উত্থান বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তার ভাঁজ কিছুটা দূর করতে পারে।
গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১৭৮টি কোম্পানির, কমেছে ১৫৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪১টির। এর প্রভাবে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬১ পয়েন্ট। আগের দিন পড়েছিল ৫৪ পয়েন্ট।
গতকাল লেনদেন শুরুর পর দুই ঘণ্টায় সূচক ওঠানামা করলেও আগের দিনের বিপরীতে গিয়ে শেষ আড়াই ঘণ্টায় টানা উত্থান হয়। দিন শেষে ডিএসইএক্সের অবস্থান সাত হাজার পয়েন্ট ছুঁইছুঁই হয়ে ছয় হাজার ৯৯৪ পয়েন্টে স্থির হয়ে লেনদেন শেষ করে। সূচকের এ অবস্থান গত ৭ ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন সূচকের অবস্থান ছিল সাত হাজার ৪৮ পয়েন্ট। এছাড়া অন্য দুই সূচক ডিএসইএস ১২ ও ডিএস৩০ সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়েছে।
এদিন সূচক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে দুটি কোম্পানি। এর একটি আইসিবি, অন্যটি রবি। আইসিবির শেয়ারদর বেড়েছে পাঁচ দশমিক ২৮ শতাংশ, এতে সূচক বেড়েছে আট দশমিক ৪৯ পয়েন্ট। রবির শেয়ারদর বেড়েছে দুই দশমিক সাত শতাংশ, এতে সূচক বেড়েছে আট দশমিক ২৪ পয়েন্ট। সূচক বৃদ্ধিতে শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানির মধ্যে বাকি আটটি কোম্পানির অবদান ছিল ৩২ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে ১০টি কোম্পানির কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ৪৯ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি সূচক তিন দশমিক ১০ পয়েন্ট কমেছে ওয়ালটনের শেয়ারদর শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ কমার কারণে। ইউনাইটেড পাওয়ার, গ্রামীণফোন, বার্জার পেইন্টস, সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপারস, ডেল্টা লাইফ ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও এসআইবিএল সূচক কমিয়েছে কিছুটা। সব মিলিয়ে এ ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১২ দশমিক ৮১ পয়েন্ট।
লেনদেনের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিক্রেতাদের চেয়ে ক্রেতাদের আধিপত্য বেশি ছিল। সেবা ও রিয়েল এস্টেট এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ক্রয় চাপ বেশি ছিল। অন্যদিকে পাট ও ব্যাংক খাতে বিক্রয় চাপ বেশি ছিল। বিনিয়োগকারীদের ‘এন’ ক্যাটেগরির শেয়ার কিনতে ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার ছেড়ে দিতে দেখা গেছে।
এদিন ডিএসইতে মোট এক হাজার ৪৮৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন এটি ছিল এক হাজার ৪৬১ কোটি আট লাখ টাকা। এ লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে যথাক্রমে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ১৪ দশমিক ৮২, বিবিধ খাত ১২ দশমিক ১১, প্রকৌশল ১১ দশমিক ৭৯, জীবন বিমা আট দশমিক ০১ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাত সাত দশমিক ৫৬ শতাংশ। এছাড়া লেনদেনে এগিয়ে ছিল ব্যাংক, বস্ত্র, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য খাত।
দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো। ৮৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে গতকাল। এ ছাড়া প্রকৌশল খাতের ৭৯ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধি এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে।
ব্যাংক খাতের শেয়ারের ৫০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে, বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। বাকি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ছিল আগের দিনের মতো। বস্ত্র খাতেরও একই অবস্থা ছিল। লেনদেনে এ খাতের ৪৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। বেড়েছে ৪১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর।
বিমা খাতের মধ্যে জীবন বিমা খাতের শেয়ারগুলোর উত্থান ছিল বেশি। সে তুলনায় সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কম বেড়েছে। গতকাল জীবন বিমা খাতের ৭০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। আর ৩০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। সাধারণ বিমা খাতের ৩০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। ৬৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে।