নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ‘শর্ত মেনে’ দেশ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সারের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা করে বাড়ানোর পরদিন গতকাল বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে বিএনপির নিহত ও নিখোঁজদের স্বজন এবং ‘নির্যাতনের শিকার’ নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পক্ষ থেকে দেয়া হয় এই উপহার।
ফখরুল বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে একদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে এবং সেই বাড়ানোর পরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বাংলাদেশে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছেÑদাবি করে ফখরুল বলেন, ‘একদিকে বিশাল বিশাল অংকের মালিক, তাদের বাড়ি-গাড়ি, বিলাস-বৈভব। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট করে তারা বিদেশে পাচার করছে এবং বাড়ি ঘর কিনছে থাকছে।’
‘অন্যদিকে আমাদের সাধারণ মানুষেরা দুই বেলা দুই মুঠো খাওয়ার জন্যে তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে। তাও সে পুরোপুরি পাচ্ছে না। কারণ জিনিসপত্রের দাম তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে।’ ‘ওরা দেশকে বধ্যভূমি করেছে’ অনুষ্ঠানে ‘নিখোঁজ’ ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরু, নুরুজ্জামান জনি, মাহমুদুর রহমান বাপ্পী, পারভেজ রেজা, তরিকুল ইসলাম তারা, মো. সোহেল, মফিজুল ইসলাম রাশেদ, জাকির হোসেন, জাকির হোসেন মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কাওসার, জাসাসের আমিরুল ইসলাম মিন্টুর পরিবারের সদস্যদের কাছে ?উপহার তুলে দেয়া হয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারাদেশে এমন এক হাজার পরিবারের কাছে ‘ঈদ উপহার’ পৌঁছানো হবে, যা আজ শুরু হলো।
উপহারের ব্যাপারটা একেবারেই ‘গৌণ’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘এই উপহার তাদের এই কথাটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে, আমরা তাদের ভুলি যাইনি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘সারাদেশে আমার মনে হয় যে, সাতশর ওপরে আছেন যারা গুম হয়ে গেছেন, সহাস্রাধিক গণতান্ত্রিক কর্মী আছেন; যারা খুন হয়ে গেছেন। এই একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে গত ১৪/১৫ বছর ধরে।’
‘আওয়ামী লীগ সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং এই অত্যাচার-নির্যাতন-গুম-খুন করেই তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। আজকে সমগ্র দেশ বলতে কি একটা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। আপনি খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন হত্যা-খুন-গুম চলছে।’
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘নির্মূল করে দেয়ার জন্য’ এই ‘গুম’ কথাটা আগে বাংলাদেশের মানুষ জানত নাÑমন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘লাতিন আমেরিকায় আমরা শুনেছি যে, এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স, তুলে নিয়ে গিয়ে নাই হয়ে যাওয়া। এটা বাংলাদেশে নতুন করে আওয়ামী লীগ প্রচলন করেছে।’
স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ও ‘গুমের অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটেছে’ বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গঠনটাই এরকম। একদিকে সন্ত্রাস আরেকদিকে দুর্নীতি। এই দুটার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকে।’
ফখরুল বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এভাবে গুম-খুন হয়ে, নির্যাতিত হয়ে আর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে না। মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। ১৭ জন প্রকাশ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে প্রাণ দিয়েছে। এই রক্তস্রোত ও বাচ্চাদের কান্না কখনও বৃথা যেতে পারে না।’
এছাড়া বিএনপির তাইফুল ইসলাম টিপু, যুবদলের মামুন হাসান, কামরুজ্জামান দুলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, নাজমুল আহসান, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারও অনুষ্ঠানে ছিলেন।