নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বিএনপি নেতা এমএএইচ সেলিমের (সিলভার সেলিম) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদকে করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী হিন্দু নির্যাতনের কুশীলব এমএএইচ সেলিম (সিলভার সেলিম) আওয়ামী লীগের ডোনার। বিএনপির শীর্ষ নেতারা হামলা-মামলাসহ নানা হয়রানির শিকার হলেও সিলভার প্রশাসনসহ প্রভাবশালীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে কৌশলে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সিলভার সেলিম সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানারকম অনিয়মের অভিযোগে জড়িত। টাকার বিনিময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক রাখেন এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নারী নির্যাতন, ভাড়াটিয়া হয়রানিসহ তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম রয়েছে।
গুলশানে বিশাল সিলভার টাওয়ারসহ বেশ কয়েকটি বাড়ির মালিক তিনি। এসব বাড়ি ভাড়া দিয়ে তিনি মোটা অঙ্কের সিকিউরিটি মানি গ্রহণ করেন। কিন্তু ভাড়াটিয়া চলে যাওয়ার সময় এসব সিকিউরিটি মানি ফেরত দেন না। উল্টো সিকিউরিটি মানির টাকাও আত্মসাৎ করেন। এসব ব্যাপারে গুলশান থানায় একাধিক অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
বিএনপি-সমর্থিত ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক হয়রানির কারণে ব্যবসা বন্ধ ও বিক্রি করলেও বহাল তবিয়তে আছেন সিলভার সেলিম। ২০০৭ সালের পর ভোল পাল্টিয়ে তিনি পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী বনে গেছেন। মনজুর আলম, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আসলাম চৌধুরী, আব্দুল আওয়াল মিন্টুসহ বিএনপি ঘরানার ব্যবসায়ীরা নিয়মিতভাবে দৌড়ের ওপর থাকলেও সিলভার সেলিম সরকার-সমর্থিত ব্যবসায়ীদের মতো খোশ মেজাজে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমএ সেলিম শেয়ার বিজকে বলেন, দুদকে অভিযোগ করা হলে দুদকের সঙ্গে কথা বলব। আপনি তো দুদকের কেউ নন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চল মেহেন্দীকুঞ্জের একসময়কার হতদরিদ্র সেলিমের উত্থান ১৯৯৮ সালের দিকে। বাগেরহাট জেলায় ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টানা ১৮ বছর জেলা বিএনপির সভাপতির নেতৃত্ব দিতেন অ্যাডভোকেট মো. মোজাফ্ফর হোসেন। তিনি দল থেকে সরে দাঁড়ানোর পর জেলা বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ১৯৯৮ সালে সিলভার সেলিম জেলা বিএনপির হাল ধরেন। এ সময় আকস্মিকভাবে তিনি বিএনপির দলীয় মনোনয়নও বাগিয়ে নেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-২ আসন থেকে এমএএইচ সেলিম বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ হেলাল উদ্দিনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর শুরু হয় তার উত্থান। তিনি জনশক্তি ব্যবসার মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন, হয়ে ওঠেন দলের বড় মাপের ডোনার। এভাবেই তিনি তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরেরও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি।
জানা যায়, ১৯৫৫ সালের ১৩ মার্চ এমএএইচ সেলিম জš§গ্রহণ করেন। তার বাবা বেলায়েত হোসেন ছিলেন কৃষক। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই তিনি আদম ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। এর ধারাবাহিকতায় হাওয়া ভবনের সুনজরে এসে দলের পৃষ্ঠপোষক হয়ে যান। নিয়মিত দলকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে তিনি তারেক রহমানের নজরে আসেন। এরপর নিজের ব্যবসার প্রসারের পাশাপাশি ‘চ্যানেল ওয়ান’-এর বড় অংশের শেয়ারহোল্ডার হন তিনি।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে দুদকে মামলায় তিনি কারাগারে যান। পরে জামিনে মুক্ত হলেও সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে তাকে আর দেখা যায়নি। তবে এখন পর্যন্ত তিনি দলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় রয়েছেন বলে জানা যায়।