Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 1:26 pm

ক্ষুধা থেকে মানুষকে রক্ষায়ও উদ্যোগ নিন

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের তথ্য, বিশ্বজুড়ে গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৯ সালে ‘দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থার’ মধ্যে যে পরিমাণ মানুষ বসবাস করেছেন, ২০২০ সালে সেই সংখ্যা ছয়গুণ বেড়েছে। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এএফপির বরাত দিয়ে গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কভিড মহামারি এই গরিব মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও প্রভাব ফেলেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আগামীকাল সোমবার বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। ৭৮ বছর ধরে বৈশ্বিক দারিদ্র্য, দুর্যোগ, অভিবাসন সমস্যা নিয়ে কাজ করছে অক্সফাম। বিশ্বের খ্যাতনামা থিঙ্কট্যাংক ও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করা নীতিগবেষণা-সাহায্য সংস্থাগুলো বেসরকারি সংগঠনটির তথ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমরা মনে করি, এফএও’র প্রতিবেদনও অক্সফামের প্রতিবেদনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে।

কভিড মহামারি দেশে দেশে যে মানবিক বিপর্যয় নিয়ে এসেছে, সেটি মোকাবিলায়ও উদ্যোগ প্রয়োজন। কয়েকটি দেশে আগে থেকেই খাদ্য সংকট ছিল। এখন কভিড মহামারি ও এর কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতিকে আরও সর্বগ্রাসী করেছে। এখন শুধু মহামারিতে প্রাণহানির তথ্যই নেয়া হয়। এর পাশাপাশি খাদ্য সংকটে সাধারণ মানুষ যে ক্রমেই দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে, সেটিও মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। মানুষকে মহামারিতে আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষায় যেমন ব্যবস্থা নিতে হবে, খাদ্যের অভাবে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়া থেকেও রক্ষা করতে হবে। এর অভিঘাতও একসময় অর্থনীতিতে জীবনযাত্রায় পড়বে। দুর্বল প্রজš§ ও জনগোষ্ঠী থেকে কর্মক্ষম সবল মানবসম্পদ পাওয়া দুষ্করই হবে। তাই মানুষকে কভিড থেকেও সুরক্ষা করতে হবে, খাদ্যাভাব থেকেও রক্ষা করতে হবে।

লকডাউন, শাটডাউন কিংবা কঠোরতম বিধিনিষেধ, সবই দরকার কিন্তু হতদরিদ্র শ্রমজীবী অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মী সবার অন্নের সংস্থান করতে হবে। অক্সফামের তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ‘দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়’ এবং চরম ক্ষুধায় রয়েছে সাড়ে ১৫ কোটি মানুষ। সন্দেহ নেই, আমাদের দেশেও এমন লোক আছেন। কভিডকালে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কী পরিমাণ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা হুমকিতে, সেটির সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। বলা হচ্ছে, কভিডকালে কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। কিন্তু কেউ মারা না যাওয়ার অর্থ এই নয়, কভিডে মানুষের কষ্ট বাড়েনি। দিন খাওয়া মানুষ এবং বেকার হয়ে পড়া পরিবহন শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশাচালক, দিনমজুর, হোটেল-রেস্তোরাঁকর্মী, ভাসমান বিক্রেতাদের বড় অংশই সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি। অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ব্যাহত হলে সব সময়ই কিছু লোকের জীবিকা হুমকিতে পড়ে। দৈনিক ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম (১৬১ টাকা) আয় করলে ওই ব্যক্তিকে গরিব হিসেবে ধরা হয়। এ শ্রেণিবিন্যাসও এখন অর্থহীন। দুর্মূল্যের এ সময়ে ১৬১ টাকা অতি নগণ্য। তাই তাদের সুরক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে। মহামারির পাশাপাশি ক্ষুধা থেকে মানুষকে রক্ষায়ও উদ্যোগ নিতে হবে।