ক্ষেতের পোকা দমনে হতে হবে সিরিয়াস

আমাদের একটি বড় অর্জন ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। কিন্তু প্রায়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে এটি হুমকির মুখে পড়ছে। যেমন নড়াইলে তিন উপজেলায় পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমনক্ষেত। এ খবর রয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। এবার ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণ হিসেবে মোটা দাগে বন্যাকেই দায়ী করা হচ্ছে। পোকার আক্রমণে কী পরিমাণ শস্য বিনষ্ট হচ্ছে, এক্ষেত্রে তারও সুস্পষ্ট হিসাব হওয়া দরকার। চলতি বছর ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণে ধান-চাল উৎপাদনে সংকট বেড়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে। ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, কুষ্টিয়া ও নড়াইলসহ বেশ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পোকার আক্রমণে ধানক্ষেত বিনষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এরই মধ্যে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমন ধান রোপণ করেন। চালের দাম বৃদ্ধির কারণেও তাদের মধ্যে ধান উৎপাদনে আগ্রহ লক্ষ করা গেছে এ মৌসুমে। কিন্তু পোকার আক্রমণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। এর আগে ‘বøাস্ট’ রোগে উত্তরবঙ্গসহ দেশের ধান উৎপাদনকারী কয়েকটি অঞ্চলের বোরোক্ষেত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পোকার কারণে উৎপাদনে ক্ষয়ক্ষতির কোনো সুস্পষ্ট হিসাব কিন্তু প্রকাশ করা হয়নি। বিষয়টি তেমন আলোচনাও হচ্ছে না। এটি যে খাদ্যশস্য উৎপাদনে একটি চ্যালেঞ্জ তা স্বীকার করে নেওয়া দরকার। সমস্যা অস্বীকারের মনোভাব একে কেবল গভীরতরই করে তুলবে।

এটা সত্য যে, গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের পোকামাকড় প্রতিরোধী ধান উদ্ভাবন ও বিজ্ঞানসম্মত চাষ পদ্ধতির কারণে একদিকে ফলন বেড়েছে; তেমনি ক্ষেতে কীটনাশকের অবাধ প্রয়োগ কমেছে। সঠিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে পোকা দমনে কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া অব্যাহত আছে। এও স্বীকার করতে হবে, কয়েক দশকে ক্ষেতে নানা ধরনের পোকা দমনে সরকার গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। কৃষকের সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের যোগাযোগ বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। এর সুফলও স্পষ্ট। তবু জনবহুল এ দেশে স্বল্পমাত্রায় হলেও ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণকে হেলাফেলার সুযোগ নেই। কারণ বেশিরভাগ ক্ষতিকর পোকাই অল্প সময়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আরও বড় চিন্তার বিষয়, আগে উপকারী বা শিকারি পোকা হিসেবে পরিচিত ছিল এমন কয়েক ধরনের পোকা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিকর পোকায় পরিণত হচ্ছে। কিছু প্রজাতির পোকা সময়ের সঙ্গে কীটনাশক সহনশীল হয়ে পড়ছে। এসব ক্ষেত্রে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান নেই বললেই চলে। তাই জরুরি ভিত্তিতে কৃষিবিজ্ঞানীদের সহায়তায় ক্ষতিকর পোকা দমনে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বীজ বিপণন সংস্থাকে আরও সতর্ক হতে হবে, যাতে বীজে রোগের জীবাণু না থাকে। সমাধানের উপায় পৌঁছে দিতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। নতুন রোগের উপসর্গ বা পোকার সন্ধান পেলে যত দ্রুত সম্ভব অন্যান্য অঞ্চলের কৃষককেও সতর্ক করতে হবে। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা ও করণীয় প্রচার হতে পারে একটি কার্যকর উপায়। এছাড়া হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধানসহ অন্যান্য ফসলের পোকা দমনে কৃষককে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে। মোট কথা, খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি রোধে নতুন সমস্যা উদ্ভব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।