শেয়ার বিজ ডেস্ক:শামুক-ঝিনুকে ভরপুর থাকায় নদীটির নাম দেয়া হয়েছিল ঝিনাই নদী। পানিতে পরিপূর্ণ থাকা এ নদীটিতে সব সময়ই চলশ ছোট-বড় নৌকা। নদীর দুপাড়ের কৃষকের আবাদি জমির সেচের আস্থাও ছিল এটি। তবে বর্তমানে দখল ও দূষণের কারণে খরস্রোতা এ নদীটি হারিয়েছে নিজের জৌলুস। খবর: জাগো নিউজ।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ নদীটির উৎপত্তি শেরপুরের পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে। এটি জামালপুর সদর, মেলান্দহ উপজেলার সীমান্তবর্তী ও সরিষাবাড়ী উপজেলা হয়ে টাঙ্গাইলের বংশী নদীর মোহনায় মিলিত হয়েছে। ১৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সর্পিলাকার প্রকৃতির ঝিনাই নদীর গড় প্রস্থ ৭৬ মিটার। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খনন না হওয়ায় তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে নদী ভরাট ও দখলের। অনেকে এলাকার প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে নদী দখল করছেন। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, একসময় খরস্রোতা নদী দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদী ভরাট করে নদীর বুকে গড়ে তুলেছে পাকা ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পানিপ্রবাহ না থাকায় মরে যাচ্ছে নদীটি। এই অবস্থায় নদীটি খনন ও দখলমুক্ত করা জরুরি। তা না হলে একসময় স্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে এটি।
নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা শহিজল, রহিম মিয়া, আবদুল আউয়ালসহ অনেকে বলেন, ছোটকাল থেকে দেখে আসছি এই নদীতে সারাবছরই পানি থাকত। নদীর গভীরতাও ছিল বেশ। ওই সময় নদীর বুকে নৌকা চলেছে, লঞ্চ চলেছে। অথচ ১০-১৫ বছর ধরে এ নদীতে পানি নেই, শুকিয়ে গেছে। নদীর চরে ফসল চাষ করছে চাষিরা। যে যেভাবে পারছে দখল করছে। নদীর পাশ দিয়ে যাদের জমি ছিল, মূলত তারাই দখল করেছে এই নদী।
এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নদীটি খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক, কেননা নদী বাঁচলে কৃষক বাঁচবে, বাঁচবে প্রাণিকুল। এছাড়া নদীটা খনন করা হলে খুব সহজেই চাষাবাদ করতে পারবেন কৃষকরা।
জামালপুর জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, ঝিনাই নদী এ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে। একসময় এই নদীতে সারাবছরই পানি থাকত, পালতোলা নৌকা চলত। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ নদীর দুপাড় দখল করে রেখেছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে ফসল চাষ করছে। এতে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ নষ্ট হয়ে পলি জমে নদী ভরাট হয়ে গেছে। একসময়কার খরস্রোতা ঝিনাই নদী এখন শুধুই ইতিহাস।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। নদীর প্রবাহ সচল করার জন্য এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ একটি স্টাডি সম্পন্ন করেছে। এ বিষয়ে তারা কোনো ব্যবস্থা না নিলে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।