খরস্রোতা রুপাই খালের জীবন ফিরিয়ে দিন

কক্সবাজারের পেকুয়ার খরস্রোতা রুপাই খালটি মগনামা ইউনিয়নের মৎস্য প্রজনন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের অন্যতম আধার। এই খালে মৎস্য আহরণ করে শত শত জেলে জীবিকা নির্বাহ করছে। রুপাই খালটি একসময় খরস্রোতা ছিল। খালটি বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলিত। যার পশ্চিমে কুতুবদিয়া চ্যানেল, মিষ্টি পানির বিশাল উৎসও ছিল একসময়। শুষ্ক মৌসুমে গভীর এই খালের পানি দিয়ে ফসল উৎপাদন করে আসছে মগনামার কৃষকরা। আঁকাবাঁকা এই খাল দরদরিঘোনা, ব্যাঙকুয়ালঘোনা, বাইন্নাঘোনা, রূকেরচর, দারিয়াখালী ও কুমপাড়া হয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বিস্তৃত। তবে কাটাফাঁড়ি সোনালী বাজার সড়কের আমজার বাড়ির কাছে দেওয়া বেড়িবাঁধের কারণে গতি থেমে যেতে শুরু করে, যা বিভিন্ন পয়েন্টে এখনও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তার আগের মতো স্রোত নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের সুবিধামতো বাঁধ তৈরি করছে। খাল ভড়াট করে তৈরি করছে বাড়িঘর। ফলে খালের পানির গতি প্রবাহে বিঘœ ঘটছে।
কক্সবাজারের পেকুয়ার খালটি মগনামা ইউনিয়নের অর্থনীতির অন্যতম উৎস। এই খালের দুই পাড়েই মানুষের বসতি রয়েছে। সরকারের খাসজমিতে দরিদ্র মানুষ বসবাস করে আসছে যুগ যুগ ধরে। খরস্রোতা রুপাই খাল দখলে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। সম্প্রতি এই খালের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মৎস্য ঘের ও বসতভিটা। স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্রের সদস্যরা দিনের পর দিন এক্সক্যাভেটর দিয়ে এই খাল দখল অব্যাহত রেখেছে। সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত এবং প্রবহমান এই খালটির রূপ কেড়ে নেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। কেননা প্রতি বছর ভয়াবহ বন্যায় এই খাল দিয়ে ভাটির দিকে পানি নেমে যায়। এ অবস্থায় খালে বাঁধ দেওয়ায় এবারের বন্যায় গ্রামের পর গ্রাম বানের পানিতে ভাসবে। এই আশঙ্কা স্থানীয় জনগণের। স্থানীয় মগনামা ইউনিয়নের ধারিয়াখালী, কাটাফাঁড়ি সোনালী বাজার অংশে রুপাই খাল জবরদখলের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রেখেছে প্রভাবশালী একদল দখলবাজ। তাদের গায়ের জোরে তারা দখল করে আছে এই খাল। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইতোমধ্যে রুপাই খালের প্রায় পাঁচ একর পর্যন্ত দখলে নিয়ে বাঁধ তৈরি করেছেন। পাশাপাশি এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে বসতভিটা তৈরি করে বিক্রি করছেন।
রুপাই খালের রূপ কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় ভূমিদস্যু দুর্বৃত্ত জড়িত রয়েছে। এখন কেউ এই খালে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। না হলে সেই খাল রক্ষা করা যাবে না। ফিরে পাবে না তার জীবন। এখনই সেটা রক্ষা করার উপযুক্ত সময়। এ খালটি রক্ষা করতে না পারলে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে না সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। যাদের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে রুপাই খাল। সামনে বর্ষাকাল। বর্ষণের পানি ভাটিতে যাওয়ার জন্য রুপাই খালের বাধা বাঁধগুলো কেটে ফেলতে হবে, মুক্ত করতে হবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত থেকে। না হলে বানের জলে ভাসবে রুপাই খালের তীরবর্তী মানুষ।

শতাব্দী জুবায়ের
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
smjubayer85Ñgmail.com