Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 8:54 am

খাদ্য উৎপাদনে আবাদি জমি সংরক্ষণ করুন: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য উৎপাদনের জন্য আবাদি জমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দেশ ইতোমধ্যে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য অনেক ভালো মানের ও উর্বর জমি হারিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং আবাসনের কারণে বিপুল উর্বর আবাদি জমি হারিয়ে গেছে, কারণ, পূর্ববর্তী সরকার এতে মনোযোগ দেয়নি। আমরা এ ধরনের জমি আর হারাতে চাই না এবং সে কারণেই আমরা এটি সংরক্ষণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।’ গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমআরএইউ), গাজীপুরের ২৫তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এবং প্রযুক্তি প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি কথা বলেন। খবর: বাসস।

বিএসএমআরএইউ’র বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ খুবই ছোট একটি দেশ কিন্তু মানুষের বিপুল সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য উৎপাদন নিরাপদ করতে আমাদের বিদ্যমান আবাদি জমি রক্ষা করতে হবে।’ পাশাপাশি তিনি বিজ্ঞানীদের গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে গবেষণালব্ধ মেধাস্বত্ত (ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট) যেন সঠিক উপায়ে সংরক্ষিত হয় তা নিশ্চিত করার এবং তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলায় তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। কৃষি যেমন যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে তেমনি দক্ষ কৃষি উৎপাদন কর্মীও আমাদের তৈরি করতে হবে, পাশাপাশি সরকার শিল্পায়নকেও গুরুত্ব দেয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বিএসএমআরইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বিএসএমআরএইউ বাংলাদেশের ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত। এটি ১৯৯৮ সালে সরকার প্রবর্তিত একটি আইনের মাধ্যমে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে (’৯৬ পূর্ববর্তী বিএনপি শাসনামলে) দানাদার শস্য মাত্র ১ কোটি ৬৯ লাখ মেট্রিক টনের মতো উৎপন্ন হোত সেখানে বর্তমানে ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টনের মতো চালসহ দানাদার শস্য উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। এটা কিন্তু গবেষণার ফসল। গবেষণা করেই আমরা এটা করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, এখানে অনেক বাধাও এসেছে, অনেক সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই সাফল্য দেখাতে পারছি বলেই আমাদের কখনও খাদ্য ঘাটতি হয়নি। তারপরেও আমাদের বন্যা হয়, খরা হয় নদীভাঙন হয়, ঝড় হয়, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও অনেক সময় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। কাজেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করেই আমরা ফসল উৎপাদনের বহুমুখীকরণকে কাজে লাগাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার গোপালগঞ্জ জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর কচুরিপানা হয়। সেগুলোকে বেঁধে মাচা করে ভাসমান চাষ পদ্ধতি এখন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কেননা আমাদের জমির স্বল্পতা আছে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই ব্যবস্থাটা নেয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে অনেক উচ্চ ফলনশীল বীজ ও ফসলের জাত আবিষ্কার করেছে যেটা দেশের জন্য যথেষ্ট কাজে লাগে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষির বিভিন্ন শাখায় দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির পাশাপাশি আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি উন্নত মানের গবেষণার মাধ্যমে ফসলের নতুন নতুন জাত আপনারা উদ্ভাবন করেছেন।’ তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় সব থেকে বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে এবং অনেক উন্নত জাতের বা অধিক ফলনশীল ধান, বীজ, তৈল বীজ, সবজি, ফলমূল এবং বিভিন্ন ফসলের প্রায় ৬৭টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে গবেষণা করে ১২ মাসি কাঁঠালের জিনোম সিকোয়েন্স (জš§ রহস্য উšে§াচন) আবিষ্কার করায় তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এর মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।