Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 9:04 am

খাদ্য ও ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা ফেনীর খামারিরা

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী: সারাদেশের মুরগি খামারি ও ব্যবসায়ীরা খুবই প্রতিকূল সময় অতিবাহিত করছেন। ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চলের যুবকরা এক সময় খামারে মুরগি পালন করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে খামারের বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে গুটিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় খামার ব্যবসা। গত বছরের করোনার ক্ষতি সামাল দিতে না পেরে অনেকেই ঋণ নিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আরও লোকসানে পড়েছেন। অনেকেই খামার বন্ধ করে দিয়ে তাদের পেশা বদলে ফেলেছেন। বেকার একজন যুবক উদ্যোক্তা হয়ে যখন খামারের মুরগি পালন করত, তখন তার পরিবারে ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ত। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ খামার ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে প্রবাসের দিকে ছুটছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানায়, ফেনী জেলায় ২ লাখ ৩৪০ জন খামারি রয়েছেন। এসব খামারে ব্রয়লার মুরগির সংখ্যা ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৫০টি, লেয়ার মুরগি ১৬ লাখ ১৮ হাজারটি ১২০টি, সোনালি ১ লাখ ৫ হাজার ৭৪০টি, দেশি ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি, হাঁস ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০টি। ফেনী জেলার খামারিসহ কবুতর ৮০ হাজার ৫২০টি এবং ২০ হাজার ২০০টি কোয়েল পাখি খামারে লালিত হচ্ছে।

সারাদেশে খামারি পর্যায় গড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। অথচ এক কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা। খামারি পর্যায়ে মুরগির দাম কম হলেও ভোক্তা পর্যায়ে ১৬০-১৭০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগি। এছাড়া কেজিতে ২০-৪০ টাকা দাম বেড়ে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৯০ টাকা, যা আগে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা।

সরেজমিন গিয়ে প্রত্যক্ষ করা যায়, দুই থেকে তিন বছর আগে যেসব বেকার যুবক বা ব্যবসায়ী খামারে সফলতা লাভ করেছেন তার এখন চোখে ধোঁয়াশা দেখছেন। অনেকেই আবার পাঁচ বা ছয় হাজার সেটের মুরগির খামারকে ছোট করে দুই তিন হাজার সেটে পরিণত করেছেন। অনেকে আবার এই পেশা ছেড়ে দিয়ে প্রবাস গমনে ছুটছেন।

ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের খামার ব্যবসায়ী করিম ও মামুন যৌথভাবে দাবি করেন, ‘২০২১-২২ সালে প্রতিটি বস্তায় মুরগির খাদ্যের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি হয়েছে। আগে যে বস্তা আমরা ক্রয় করতাম ১৬৫০ টাকা দিয়ে। এখন তার কিনতে হচ্ছে ৩২৫০ টাকা দিয়ে এবং এক্ষেত্রে যদি নগদে না হয় তবে ৩৩০০ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন সিন্ডিকেট তো রয়েছেই। খাদ্যের দাম ওঠানামার ক্ষেত্রে এই সিন্ডিকেটগুলো শক্ত ভূমিকা রাখে।’

সোনাগাজী উপজেলা নবাবপুরের জাফর উদ্দিন নামে একজন খামার ব্যবসায়ী দাবি করেন কিছুদিন আগে ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মানুষ ব্যাপক সমালোচনা করে। কিন্তু প্রতিটি ওষুধ এবং খাদ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যে ওষুধ আমরা ক্রয় করতাম ১৫০০ টাকা দিয়ে, এখন তা ক্রয় কত হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। এরপরও আমরা খামারিরা ব্যবসায়ীদের কাছে মুরগি কেজি দরে বিক্রি করছি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। এতে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান ডিমের যে দাম চলছে, তা চলতে থাকলে অচিরেই খামার ব্যবসা বাণিজ্যিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আনিসুর রহমান বলেন, ‘ওষুধ এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন ফেনী জেলার খামারিরা। ওষুধ এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম শিগগিরই সহনীয় অবস্থায় না এলে খামার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।’ খাদ্যদ্রব্যের দাম কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে বা ওষুধের দাম চড়া কেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম বৃদ্ধির কারণে হয়তো ওষুধ ও খাদ্যের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।’