মহসিন হোসেন, খুলনা: বোরো মৌসুমে ধানের দাম পাননি খুলনার কৃষক। তারপর প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই আমন আবাদ করতে হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ বৃষ্টিতে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়া, পোকার আক্রমণ ও ইঁদুরের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। তাই ভরা মৌসুমেও হাটে আমন ধান আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক উঠছে। ধান কম হলেও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। খুলনা জেলার হাটগুলোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাইকারি ব্যবসায়ী আসছেন না। চালের দাম কমার কারণে লোকসান এড়াতেই ধান কিনতে অনীহা ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়রা উপজেলার আমাদী, দাকোপ উপজেলার চালনা, বাজুয়া, ডুমুরিয়া উপজেলা সদর, বটিয়াঘাটা উপজেলা সদর ও কৈয়া বাজারে আমন উঠতে শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ইরি-২৩, রানি স্যালুট, জটাই, ভাইটেল ও ইরি-২৮ জাতের ধান বাজারে উঠছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনাবান্দা গ্রামের ধান ব্যবসায়ী আনন্দ বিশ্বাস জানান, কৈয়া বাজারের তুলনায় বটিয়াঘাটা উপজেলা সদরে আমন ধান বেশি আসছে। এবার ফলন কম হওয়ার পরও কৃষকরা বাজারে ধান বিক্রির জন্য আনছেন। কিন্তু বাজারে ধানের তুলনায় ক্রেতা কম। অন্যদিকে ধান কম আসছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ক্রেতা ঋষিকেশ বণিক। তিনি বলেন, গত শনিবার কৈয়া হাটে প্রায় এক হাজার মণ আমন বিকিকিনি হচ্ছে। এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রতি হাটে আনুমানিক দুই হাজার মণ ধান উঠেছিল।
মল্লিক রাইচ মিলের মালিক জানান, এক বছরের ব্যবধানে ধানের দাম মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়েছে। জটাই ৬০০ টাকার স্থলে ৭৮০ টাকা, ইরি-২৩ ৫৮০ টাকার স্থলে ৭৫০ টাকা, ভাইটেল ৮০০ টাকার স্থলে ৯৫০ টাকা, রানি স্যালুট ৯০০ টাকার স্থলে এক হাজার ৬০ টাকা ও ইরি-২৮ জাতের ধান ৮০০ টাকার স্থলে এক হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনা তালতলা গ্রামের কৃষক সুধান্য বৈরাগী জানান, তিন বিঘা জমিতে আমন আবাদে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অক্টোবরে অতিবৃষ্টি, পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকা ও ইঁদুরের আক্রমণের কারণে মাত্র ১৪ মণ ধান পেয়েছেন; যা বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। শ্রমিকের মজুরি যে হারে বাড়ছে ধানের দাম সেই হারে বাড়ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছরের ২১ আগস্ট অতিবৃষ্টিতে জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টরের আমন ও শাকসবজি বিনষ্ট হয়। দু’দিনে ২১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, দীঘলিয়া, রূপসা ও কয়রা উপজেলার প্রায় ১৩ হাজার কৃষকের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকার কৃষিপণ্য ক্ষতি হয়েছে। এ বছর খুলনা জেলায় ৯১ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার টন।