নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতের কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ৬০ পয়সা বেড়ে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ১৩ টাকা ৩০ পয়সায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দরও ছিল ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। দিনজুড়ে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭৫৪টি শেয়ার ৮৮৫ বার হাতবদল হয়, যার বাজারদর ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দিনভর শেয়ারদর সর্বনিম্ন ১২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা ৪০ পয়সায় হাতবদল হয়। তবে গত এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বনিম্ন ৭ টাকা থেকে সবর্োচ্চ ৫৯ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।
এদিকে উৎপাদন ও পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কাগজ ও মুদ্রণ খাতের প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা কোম্পানিটির কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পান।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ‘জেড’ ক্যাটেগরিভুক্ত খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারসংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ১ দশমিক ১১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ও বাকি ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে।
সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) কেপিপিএলের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা, আগের হিসাববছরে যা ছিল ২ টাকা ৯৯ পয়সা। সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬ পয়সা, আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৯৬ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৯৮ পয়সা।
সর্বশেষ ছয় বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। সর্বশেষ বছরগুলোয় কোম্পানিটির ব্যবসার পরিধিও ছোট হয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ হিসাববছর থেকে টানা লোকসানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ সামান্য আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটিকে পরিচালক লোকসান গুনতে হয়েছে চার কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বিভিন্ন খরচ শেষে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। লোকসানের কারণে আলোচ্য হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। একইভাবে পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ হিসাববছরেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাববছরে কোম্পানিটি আয় দেখিয়েছে শূন্য। এ সময়ে তাদের পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে দুই কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল আট কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
২০১৮-১৯ হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে আয় আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও কোম্পানিটির পরিচালন লোকসান গুনতে হয়েছে আট কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের এক শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।
২০১৯-২০ হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ১০৮ কোটি ছয় লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফায় ফিরলেও বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান গুনতে হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে তারা শেয়ারহোল্ডারদের দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০২০-২১ হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৫২ কোটি সাত লাখ টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খরচ শেষে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাববছরে শেয়ারেহাল্ডারদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
এদিকে সাপ্তাহিক দরবৃদ্ধির তালিকায় এর পরের অবস্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, এসবিএসি ব্যাংক পিএলসির ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেডের ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, জাহিন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেডের ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেডের ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।