খেলাপির ছাড় সুবিধা পাচ্ছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকও

নিজস্ব প্রতিবেদক: বকেয়া ঋণের কিস্তির ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই গ্রাহককে আর খেলাপি দেখানো যাবে না। ব্যাংকের পাশাপাশি ছাড়ের এমন সুবিধা পাচ্ছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। দু-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

করোনা মহামারির সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময়ে দেশের অর্থনীতির চাকা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জনগুরুত্বপূর্ণ ছাড়া সব খাতের শিল্প ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখা হয় ৬৬ দিনের জন্য। মানুষ ও যান চলাচলও বন্ধ রাখা হয়।

এমন অবস্থায় উদ্যোক্তাদের সহায়তায় সব ধরনের ঋণের কিস্তি পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়া দেয়া হয় স্বল্প সুদের নতুন প্রণোদনার ঋণ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা অব্যাহত ছিল। পরবর্তী সময়ে তার মেয়াদ বাড়িয়ে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। গত বছর অবশ্য কিস্তি পরিশোধের তাগাদা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এজন্য ছাড় পাওয়া কিস্তির সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ঋণগ্রহীতাদের ওপর। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা দেয়া হয়। ২৫ শতাংশ পরিশোধ না করলে গ্রাহককে খেলাপি হিসেবে দেখাতে হবে এনবিএফআইগুলোকে। কিন্তু উদ্যোক্তারা দাবি তুলেছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দেখা দিয়েছে। ইউরোপসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে সতর্ক অবস্থানে চলে গেছে। এসব দেশই বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সংক্রমণের হার বেড়েছে। ফলে কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রপ্তানিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য ঋণের অর্থ পরিশোধ করার আরও সুবিধা চান উদ্যোক্তারা। খেলাপি হওয়া থেকে অব্যাহতি চান তারা।

এমন দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অপরিশোধিত কিস্তির সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই গ্রাহককে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না। ফলে কোনো গ্রাহক ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই তাকে নিয়মিত হিসেবে দেখানো হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত দিয়ে দু’এক দিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কয়েকদিন পূর্বে এমন সুবিধা দেয়া হয় ব্যাংক খাতের গ্রাহকদেরও।

উল্লেখ্য, বকেয়া এসব ঋণ কিস্তির আরোপিত সুদ ও মুনাফা আয় খাতে দেখাতে পারবে এনবিএফআই। এজন্য দুই শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হবে এর বিপরীতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকের গ্রাহকদের সুবিধা দেয়ায় এখন এনবিএফআইগুলোকেও দিতে হচ্ছে। এ সুবিধা গ্রাহকরা পেলেও প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনবিএফআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, খেলাপিরা সুবিধা চাইবেই। কিন্তু দেখতে হবে প্রতিষ্ঠান কতটা লাভবান হচ্ছে। বর্তমানে খেলাপির প্রকৃত পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে না। এমনিতেই কয়েকটি কেলেঙ্কারির ধকল পোহাতে হচ্ছে সব প্রতিষ্ঠানকে।

এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো ও পরিচালনগত সমস্যা রয়েছেই। ব্যাংক খাতে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরলেও এনবিএফআইগুলোতে তার উল্টো পরিবেশ। এজন্য আরোপিত সুদ বা মুনাফা আয় খাতে স্থানান্তর করার সুযোগ বাদ দেয়াটাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। অপরদিকে এর বিপরীতে বর্তমানে দুই শতাংশ হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল খাত হওয়ায় প্রভিশনের হার কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ হওয়া উচিত।

বর্তমানে দেশে এনবিএফআইগুলোর আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ৪৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৬০৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা।