শেখ আবু তালেব: ২০১৮ সালের পুরো সময়টা জুড়েই ব্যাংক খাতের খেলাপির ঋণে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের চিত্র ব্যাংক খাতে উদ্বেগের তৈরি করেছে। এছাড়া ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের ৫১ শতাংশই দেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের কাছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের চারটি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ একটি ব্যাংক রয়েছে। ২০১৮ সালে ব্যাংক খাতের চিত্র মূল্যায়ন করে এমন তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন।
দেশের ব্যাংক খাতের বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে প্রতিবছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট নামক প্রতিবেদনটিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি ছিল পুরো সময়টা জুুড়েই। সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের উচ্চহারের কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপির চিত্র উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।
ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ না করা হলেও সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকই রাষ্ট্রায়ত্ত। ২০১৮ সালের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের তথ্য অনুুযায়ী, খেলাপি ঋণের শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংক হলো সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংক। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের শীর্ষ একটি ব্যাংক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট খেলাপির ৬৬ শতাংশই রয়েছে দেশের শীর্ষ ১০টি ব্যাংকের হাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ সময়ে মোট ঋণখেলাপির সংখ্যা হচ্ছে দুই লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ জন। ব্যাংক খাতে ২০১৮ সালে মোট শ্রেণিকৃত ঋণের হার ছিল ১০ দশমিক তিন শতাংশ। এ সময় নিট শ্রেণিকৃত ঋণের (রক্ষিত প্রভিশন সমন্বয়ের পর) হার ছিল দুই দশমিক দুই শতাংশ ছিল। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট শ্রেণিকৃত ঋণের হার ৬০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংক খাতে গ্রস খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকায়। ফলে বছর শেষে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি তিন দশমিক পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এই সময়ে।
গত ডিসেম্বর শেষে দেশের কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৫টি ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের দেশীয় ১১টি ও চারটি সরকারি খাতের। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতিতে শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। সর্বশেষ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে তিন হাজার ৩৬৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার। রাষ্ট্রায়ত্ত অপর ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের তিন হাজার ৮৭ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৮৩৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৫৯৩ কোটি টাকা।
এছাড়া বেসরকারি খাতের মধ্যে ঢাকা ব্যাংকের ৩০৯ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২২৭ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৯৫ কোটি টাকা। ট্রাস্ট ব্যাংকের ২৭০ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২২০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৯০ কোটি, এবি ব্যাংকের ১১২ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৮৫ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৩৪ কোটি, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ২৩ কোটি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২৩ কোটি টাকা।
এসব ব্যাংক খেলাপি ঋণের উচ্চহারের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে পারেনি। গত ডিসেম্বর শেষে অনেক ব্যাংকেরই প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ছয় হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সাল শেষে প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ৯টিতে ও টাকার অঙ্ক ছিল ৯ হাজার ৩৭৫ কোটি। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের সংখ্যা ও টাকার পরিমাণ দুুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিন্তু সামগ্রিকভাবে ২০১৭ সাল শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৬১৪ কোটি টাকায়।

Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 5:55 pm
খেলাপি ঋণের ৫১ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: