খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা নিন

‘খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা’ শিরোনামে গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতবেদনের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।

২০১৮ সালে ওই সময়কার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘ঋণখেলাপিদের লজ্জা নেই।’ বেঁচে থাকলে হয়তো তিনি একই কথা পুনরুল্লেখ করতেন, সন্দেহ নেই। ওই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার যৌক্তিক কারণ নেই বলেই আমরা মনে করি।

বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছেন একক গ্রহীতাকে বিপুল ঋণ জোগানোর আগে সতর্ক হতে। ঋণ দেয়ার আগে আদায়ের বিষয়টি তো ভাবতে হবে। বড় অঙ্কের ঋণ দিলে তা আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে। ‘লজ্জা নেই’ বলে খেলাপিরা ঋণ পরিশোধ করছেন না, তা যেমন সত্য; তেমনি এটিও সত্য, তবুও ঋণ পাচ্ছেন ঋণখেলাপির। ঋণগ্রহীতাদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অথবা প্রভাবশালী কারও সহায়তায় ঋণ পান। ফলে তা পরিশোধ না করার সুযোগ নেন তারা। কয়েকটি কারণে ঋণ খেলাপি হয়ে থাকেÑপর্যাপ্ত ‘সিকিউরিটি’ না নেয়া, দুর্বলভাবে সেটা মূল্যায়ন করা, বাইরের চাপে কাজটি করা। যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন, তাদের সমর্থিত লোকজন ব্যাংক থেকে অর্থ বের করে নিয়ে যায়, এটিই অভিজ্ঞতা। এ প্রবণতা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে বৈকি।

ঋণখেলাপি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের যথোপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় প্রতিবছর অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ে। এতে প্রতীয়মান হয়,

পুরোনো অনাদায়ী ঋণ আদায় তো হচ্ছেই না; নতুনভাবে জোগানো ঋণও খেলাপি হচ্ছে এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষের জোরালো উদ্যোগ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনা তদারকি করা, নজরদারি করা। এখন অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানানো দরকার। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত নেই। এ ধরনের ঋণ আদায়ে অগ্রগতি না হওয়াটা প্রমাণ করে, নিয়মিত পরিদর্শন ও মনিটর করে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অনেকেই বলেন, অর্থঋণ আদালত আইন যুগোপযোগী না হওয়ায় মামলা নিষ্পত্তির হারও বাড়ছে না। কিন্তু এ পরামর্শ তো অনেক দিনের। এখনও তা ‘যুগোপযোগী’ হচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। বড় ঋণ নিয়ে লাপাত্তাও হয়ে যাচ্ছেন গ্রহীতা। ব্যাংক কর্মকর্তারাও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালীদের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেন। কড়া জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে তাদেরও। নির্দিষ্ট সময় অন্তর খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানাতে হবে, যাতে এ বিষয়ে উন্নতি ঘটানোর একটা চাপ থাকে। অবশ্য এখন নাকি এক ক্লিকেই সব জানতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাই বলা যায়, দায় তাদেরও রয়েছে। আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে খেলাপি ঋণ বাড়তেই থাকবে এবং একসময় তা কখনও আদায় না হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।