Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 2:55 pm

খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দিন

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়লেও খেলাপি ঋণ থেকে অর্থ আদায় সেভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ থেকে অর্থ আদায়ের পরিমাণ কমেছে এক হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা বা ৩৭ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর উদাসীনতা রয়েছে। তাছাড়া অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ আদায় হচ্ছে না।

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রোববারই বিদেশ ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশ নেয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে জরুরি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। মন্ত্রণালয় একই সঙ্গে সব ধরনের গাড়ি, জাহাজ ও বিমান কেনা বন্ধ রাখা এবং ভূমি খাতের অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে।  কৃচ্ছ্রসাধন ও ব্যয় কমাতে যেখানে রাষ্ট্র প্রতিকারমূলক ব্যবস্থায় জোর দিচ্ছে, সেখানে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় ক্রমেই কমছে, এটি দুঃখজনক।

উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণদানের একটি শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা। অথচ এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঋণ পরিশোধে নীতি শিথিল করেছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য। কিন্তু সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করছেন না। কভিডের সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালে ঋণ পরিশোধে অনেক ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছর ঢালাওভাবে ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেয়া হয়। ২০২১ সালে যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল, তার মাত্র ১৫ শতাংশ দিলেই তাদের নিয়মিত দেখানো হয়। তারপর কতভাবে কত ছাড় ও সুবিধা দেয়া হয়েছে, কিন্তু খেলাপিরা তা কাজে লাগাননি।

ঋণ দেয়ার সময় ঝুঁকি পর্যালোচনা ছাড়াই তার আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ দিয়ে থাকে আমাদের ব্যাংকগুলো। বড় অঙ্কের ঋণ দিলে তা আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ না করায় তা একসময় খেলাপি হয়। ব্যাংকার-খাতক যোগসাজশ ছাড়া বড় খেলাপি হওয়া সম্ভব নয়। এ ঋণগ্রহীতাদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অথবা প্রভাবশালী কারও সহায়তায় ঋণ পান। ফলে তা পরিশোধ না করার সুযোগ নেন তারা। ঋণখেলাপি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় প্রতিবছর অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ে। ঋণখেলাপি সমস্যা বিশ্বের সব দেশেই আছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো কোথাও এত ছাড় দেয়া হয় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনা নজরদারি করা। প্রতিটি ঋণ তথ্য এখন এক ক্লিকেই জানা যায়; তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেন খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা আমাদের জানা নেই। খেলাপি ঋণ আদায়ে কোন দেশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অজানা নেই। আমরাও সেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারি।