শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘খ্রিষ্টীয় নতুন বছর, ২০২২’ উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি গতকাল শুক্রবার দেয়া বাণীতে খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২২ উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। খবর: বাসস।
তিনি শুভেচ্ছাবাণীতে বলেন, প্রকৃতির নিয়মেই যেমন নতুনের আগমনী বার্তা আমাদের উদ্বেলিত করে, তেমনি অতীত-ভবিষ্যতের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পুরোনো স্মৃতিসম্ভারে হারিয়ে যাওয়ার চিরায়ত স্বভাব কখনও আনন্দ দেয়, আর কখনোবা কৃতকর্মের শিক্ষা নব উদ্যোমে সুন্দর আগামীর পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ ও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ বাঙালি জাতির জীবনে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা এ সময়ে জাতির পিতার জš§শতবার্ষিকী উদ্যাপনের অনুষ্ঠান ২০২১ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করি। এরই মধ্যে আমরা চলতি ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করি, যেখানে সার্কভুক্ত পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানরা সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিয়েছিলেন। তাছাড়া বিশ্বের ৭৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা ভিডিওবার্তা ও অভিনন্দনপত্র পাঠিয়েছেন, যেখানে সবাই আমাদের সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের উদ্যোগে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ শহরে জাতির পিতার নামে স্মারক ভাস্কর্য স্থাপন এবং সড়ক ও পার্কের নামকরণ করা হয়েছে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সৃজনশীল অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করেছে।
১৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত জনকল্যাণমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
তিনি বলেন, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি যেখানে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত, সেখানে কভিডকালেও আমরা পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতেও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। এখন আমাদের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর। ৯৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিচ্ছি। পদ্মা সেতু নতুন বছরের মধ্যবর্তী সময়ে খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছি। রাজধানীতে মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করেছি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’র সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে রূপকল্প-২০২১ অর্জন করেছি। দেশকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছি। মুজিববর্ষে আমরা অঙ্গীকার করেছি কেউ গৃহহীন থাকবে না। আমরা শহরের সব সুযোগ-সুবিধা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে দেব। নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান কভিড মহামারি পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে তিনি ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, ক্রান্তিকাল উত্তরণে ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হয়েছে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২৮টি প্যাকেজের আওতায় এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। বাংলাদেশ ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমরা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা, ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমাদের সরকার তারুণ্যের শক্তির সঙ্গে ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সমন্বিত করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ায় সক্ষম প্রজš§ সৃষ্টিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সর্বদা সমুন্নত রাখা, দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করাসহ ধর্মীয় উগ্রবাদসহ যেকোনো সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করার জন্য সবাইকে নতুন বছরে প্রতিজ্ঞা করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নতুন বছরে মানুষে-মানুষে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার, সব সংকট দূরীভূত এবং সবার জীবনে অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।