নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে বড় পরিসরে টিকাদানে সপ্তাহব্যাপী যে কর্মসূচি পালিত হলো, তাতে অব্যবস্থাপনাই প্রকট হয়ে দেখা দিল। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও অব্যবস্থাপনার কারণে টিকা নিতে বেগ পেতে হয়েছে অনেককে। অনেকে টিকাই পাননি। মুখ দেখে টিকা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মহামারির বিরুদ্ধে সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে গত শনিবার থেকে দেশজুড়ে ছয় দিনের গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করে সরকার। এর শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার টিকা নিতে আগ্রহী অনেক মানুষই ভিড় করেছিলেন রাজধানীর টিকাদান কেন্দ্রগুলোয়।
ভাটারায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের গণটিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোরেই দীর্ঘ লাইন হয়ে গেছে। সকাল সাড়ে ৭টায় টিকা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে লাইনে না দাঁড়াতে সবাইকে কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে মাইকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছিল। এতে অনেকে টিকা না নিয়ে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান।
কাউন্সিলরের কার্যালয়ের পাশের বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম বাদল বলেন, ‘পরপর তিন দিন আসছি। প্রথম দিন আসার পর বলে সিল মারতে হবে। সিল মারার জন্য গেলাম তখন বলছে, বিকাল ৪টায় আসেন। এর মধ্যে দেখলাম কিছু মানুষ সাইড দিয়ে কাগজ দিয়ে সিল মেরে নিচ্ছে। আমাদের পরিচিত লোক না থাকায় আমাদের দেয়নি।’
তবে সাধারণ মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া হলেও একদল লোককে টিকা নিতে দেখা গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী খলিলুর রহমান বলেন, ‘কাউন্সিলর অফিসের লোকজন বলছেন, আজকে আসতে, তাই এসেছি।’
ব্র্যাকের সহযোগিতায় এই কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে। ব্র্যাক জানিয়েছিল, যারা নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এসএমএস পাননি তাদের ৯টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। অন্য এলাকা থেকে কেন্দ্রে আসা এমন টিকাপ্রত্যাশীদেরও ফিরিয়ে দিয়েছেন কাউন্সিলর কার্যালয়ের পরিচয়দানকারীরা।
জানতে চাইলে কেন্দ্রে থাকা ব্র্যাকের এরিয়া ম্যানেজার মির্জা হাফিজ বলেন, কাউকে বাধা দেয়ার বিষয়টা আমার জানা নেই।’ অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে কয়েকবার ফোন করলেও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে সকালে মিরপুরের পল্লবী ২নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে দেখা যায় টিকার জন্য কয়েকশ মানুষের সারি।
গত কয়েক দিন চেষ্টা করেও টিকা না পাওয়ায় তাদের অনেকেই রাত থেকে টিকাকেন্দ্রের সামনে জড়ো হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে টিকাদান শুরুর পর থেকেই কেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের পরিচয়ে পিছনের ফটক দিয়ে কেউ কেউ টিকা নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে সারিতে দাঁড়ানো টিকাপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ দেখালেও সে তৎপরতা বন্ধ হয়নি।
ফলে টিকা নিতে বিলম্ব হওয়ায় কেউ কেউ টিকা ছাড়াই ফেরত যান। বেলা সাড়ে ১২টায় দেখা যায়, টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় সারিতে দাঁড়ানো অনেকে টিকা পাননি।
এই কেন্দ্রে টিকা না পেয়ে হতাশ নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘টিকা তো পেলাম না। দুই-তিন দিন এলাম, প্রতিদিনই পিছন দিক দিয়ে লোক ঢুকছে। আত্মীয়স্বজন, দলের লোকÑএসব পরিচয়ে ঢুকছে। আবার কবে টিকা দেবে, তখন তো এমনই হবে।’
আরেক টিকাপ্রত্যাশী সোহেল রানা জানান, ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা না হওয়ায় টিকাকেন্দ্রের গেট থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কেউই কথা বলতে চাননি।
অব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, ‘সরকার তো সবাইকে টিকা দিতে বলছে। এরকম কিছু হয়ে থাকলে সেটা ঠিক হয়নি। সরকারের তো এরকম কোনো নির্দেশনা ছিল না।’
এদিকে গণটিকাদান কর্মসূচির মধ্যেই টিকা সংকটে রাজধানীর মিরপুরের বর্ধিত পল্লবীর একটি নিয়মিত টিকাকেন্দ্রে বৃহস্পতিবার টিকা দেয়া বন্ধ ছিল। সকাল থেকে কয়েকশ টিকাপ্রত্যাশী নগর মাতৃসদন কেন্দ্রে এলেও সবাইকে টিকা না নিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে। কবে নাগাদ আবার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া শুরু হবে, তা জানাতে পারেননি এই কেন্দ্রের কেউই। বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে শতাধিক মানুষ টিকা কার্ড নিয়ে এসেছেন। তারা জানান, বৃহস্পতিবার এই কেন্দ্রে টিকা নেয়ার এসএমএস পেয়েই তারা এসেছেন। টিকার মজুত না থাকায় তাদের এর আওতার বাইরেই থাকতে হচ্ছে।
এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মী মোহাম্মদ ইয়াসিন জানান, এই কেন্দ্রে এতদিন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছিল।
তিনি বলেন, ‘আজকে আর টিকা নেই, তাই কাউকেই টিকা দিচ্ছি না। যারা আসছে তাদের চলে যেতে বলছি।’
কবে আবার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা বলতে পারছি না। শনিবার থেকে আমরা মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেব। প্রথম ডোজ টিকা যদি সরকার দিতে বলে, তখন আবার শুরু হবে।’ টিকাদান বন্ধের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, ‘যেসব কেন্দ্রে টিকা শেষ হয়ে গেছে, সেসব কেন্দ্রে টিকাদান বন্ধ ছিল। কাল-পরশু পেয়ে গেলে হয়তো আবার শুরু করা হবে।’