কিছুদিন আগে রাজধানীর মহাখালীর ওয়ারলেস গেট থেকে রবরব পরিবহনের একটি বাসে উঠি। বাসটি গুলশান লিংক রোড পর্যন্ত যাবে। অফিসের জন্য প্রতিদিন এ পথের যাত্রী আমি। গাড়িভাড়া আমার জানা, কারণ প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়ে আমি যাতায়াত করি। সেদিন গাড়ির সহকারীর সঙ্গে ঘটল ভিন্ন ঘটনা। ইলেকট্রনিক ডিভাইস এনে রবরবের সহকারী বলল, ‘মামা, ভাড়া দেন।’ প্রতিদিনের মতো আমি তাকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে বললাম, ‘লিংক রোড নামব।’ সে জিজ্ঞেস করল, ‘মামা, উঠেছেন কোথা থেকে?’ জবাবে বললাম, ‘ওয়ারলেস।’ সে বলল, ‘ও আচ্ছা, মহাখালী থেকে বাড্ডা ১৫ টাকা ভাড়া।’ আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন ১৫ টাকা? এখানে তো ১০ টাকা ভাড়া।’ গাড়ির ওই সহকারীর উত্তর ছিল, ‘মেশিনে যা আছে, তা-ই।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘মেশিনটা কখন থেকে?’ তার উত্তর ছিল, ‘কিছুদিন আগে থেকে।’ কিছু না বলে ১৫ টাকা দিয়ে দিলাম। পরে এক যাত্রী ওই সহকারীর সঙ্গে যুক্তি-তর্ক শুরু করার পর সে চুপ হয়ে গেল এবং বলল, ‘মামা, মেশিনে যা আছে, তা দিতে হবে।’
ঢাকার প্রতিটি গাড়ি মেশিন চালু করবে। ভোগান্তি নিয়ে ঢাকায় বসবাস করি। প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ দৈনদিন কাজের জন্য গণপরিবহনের বাস ব্যবহার করে। হুটহাট মনগড়া ভাড়ার সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছাড়াও চালকের অযোগ্য চালনায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। একটা বাস আরেকটা বাসের আগে যাওয়ার জন্য দ্রুত ওভারটেক, একটার পেছনে আরেকটা ধাক্কা দেয়া, আবার অনেক সময় ওভারটেক করার সময় দুটি বাস ঘেঁষে যাওয়ার সময় গ্লাস ভেঙে যাত্রীদের গায়ে পড়ে হাত-মুখ কেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি ঢাকা শহরে চলাচল করে আইন ভেঙে স্বাধীন রাজার মতো। অধিক যাত্রী গাড়িতে থাকার পরও গাড়িতে যাত্রী নেয়ার জন্য ট্রাফিক সিগন্যালে পড়তে ইচ্ছা করে গাড়ি চালাচ্ছে অসাধু চালকরা। ফলে অনেক পরীক্ষার্থী সময়মতো উপস্থিত হতে পারছে না পরীক্ষা কেন্দ্রে। ফলে ক্ষতি হচ্ছে যাত্রীদের। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে খারাপ ভাষায় কথা বলছে বাসের সহকারী ও চালক।
ঢাকার সড়কসন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতি মাসে থাকা জরুরি। তাহলে ইচ্ছামতো ভাড়ার কথা বলে সংশ্লিষ্টরা মাস্তানি করতে পারবে না। এছাড়া রাস্তায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে গাড়ি চালাতে দেখলে যথাযথ দণ্ড প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া গাড়ির মধ্যে যাত্রীদের সুবিধার লক্ষ্যে সিটের বাইরে যাত্রী তোলা নিষেধ করা প্রয়োজন। ফলে নারী যাত্রীরা লাঞ্ছনা থেকেও রক্ষা পাবে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালক রাস্তায় উঠলে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। পরিশেষে হাসিগুখে ঘর থেকে বের হওয়া ব্যক্তির অযোগ্য পরিবহনের জন্য যেন কাঁদতে না হয়, কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা উচিত দায়িত্বরত পরিবহন মালিক সমিতির সব সদস্যের।
হামিদুর রহমান
মহাখালী, ঢাকা