গণপরিবহন ব্যবস্থাকে যাত্রীবান্ধব করা গেলে সাধারণ মানুষ গণপরিবহন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবেন। এখন যাদের সামর্থ্য নেই, তারাই শুধু গণপরিবহন ব্যবহার করেন। গণপরিবহন এখনও সর্বজনীন হয়ে না ওঠায় অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশের শহরগুলোয় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কোনো পরিবারে তো প্রত্যেক সদস্যের ব্যবহারের জন্য আলাদা গাড়ি আছে। নগরে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল কমাতে জোড়-বিজোড় সংখ্যার ভিত্তিতে গাড়ি চলাচল নির্ধারণের কথা উঠেছিল একবার। এমন খবরে নাকি গাড়ি বিক্রিও বেড়ে গেছে। যদিও ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, কিন্তু কোনো পরিবারে জোড়-বিজোড় সংখ্যার ভিত্তিতে একাধিক গাড়ি কেনা হয়ে গেছে। এখন ওই আইন হলেও তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলের জন্য গাড়ির ঘাটতি হবে না।
গতকাল ছিল জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষে গণপরিবহন ও নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো এ খাতের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। যেমনÑরোড সেফটি ফাউন্ডেশন শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, ঢাকায় ৫৩ শতাংশ যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করেন। মাত্র ১১ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত গাড়ি। অথচ ৭০ শতাংশ রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার দখলে থাকে; মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ, রিকশার কোনো হিসাব নেই। সহযোগী সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতি আরেক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছেই। প্রতিবছর দেশে ৮০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছেন। এ হিসাবে গড়ে প্রতিদিন প্রতিবন্ধী হচ্ছেন ২২০ জন।
আমরা মনে করি, শুধু দিবস পালনের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক এবং গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ১১ শতাংশ যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার্য গাড়ি ৭০ শতাংশ সড়ক দখল করে, তাহলে ৮৯ শতাংশ যাত্রীর জন্য ৩০ শতাংশ সড়ক কি পর্যাপ্ত!
যানজট নিয়ন্ত্রণে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, ইউলুপ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও যানজট কমছে না, বরং বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব প্রকল্প গ্রহণের আগে যথেষ্ট মাত্রায় সমীক্ষা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। চাঁদাবাজি, অনিয়ম প্রভৃতি রোধের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এছাড়া গণপরিবহন ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করেও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা যায়। আমাদের পরিবহনশ্রমিকরা যাত্রীদের টেনে-হিঁচড়ে নিজের গাড়িতে ওঠান চিৎকার-চেঁচামেচি করে। অ্যাপ বা স্মার্ট পদ্ধতিতে মাস ও দৈনিক ভিত্তিতে টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা করা গেলে যাত্রীকে ডাকার প্রয়োজন পড়বে না। অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকরা নগদ টাকার ঝামেলা এড়িয়ে খুব সহজেই ডিজিটাল পেমেন্টে টিকিট কিনতে পারেন। যাতায়াতে নাগরিকরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলে গণপরিবহন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবেন।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় গণপরিবহনে শৃঙ্খলার দিকে নজর দিতে হয় না। তারা যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রথাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এখন নান্দনিকতায় গুরুত্ব দিচ্ছে। স্টেশনগুলো সুন্দর করে সাজানো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রং-বেরঙের নকশায় সুসজ্জিত। টোকিওর গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা এত সুষ্ঠু যে, জাপানি ভাষা না জানা ব্যক্তিও শহরটিতে গণপরিবহন ব্যবহার করে স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারেন।