নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে পাকিস্তানিরা যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না বলে মনে করে ইউরোপের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের আশা, কয়েক বছরের মধ্যে এ স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।
গতকাল রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের বিষয়ে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আমরা একাত্তর, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) ও প্রজš§ ’৭১ নামে তিনটি সংগঠন।
ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে এসেছে ১৯ মে। তারা থাকবে ২৭ মে পর্যন্ত। এ সময়ে তারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার শিকার ব্যক্তি, তাদের আত্মীয়স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, গণকবর ও গণহত্যার স্থান পরিদর্শন করবে।
স্বাধীনতার ৫২ বছরেও বাংলাদেশে চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি; এ স্বীকৃতি পেতে আরও কত অপেক্ষা করতে হবেÑএমন এক প্রশ্নের জবাবে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য নেদারল্যান্ডসের সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, এ কারণে সময় লাগছে যে যখন বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, তখন ঠাণ্ডাযুদ্ধ চলছিল। নিশ্চিতভাবে, পশ্চিমা দেশগুলো পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। যখন গণহত্যা চলছিল, বিশ্ব জানত কী ঘটছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছিল এবং তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছিল। আন্তর্জাতিক ধারণা ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রহ বাংলাদেশ। তাই সরাসরি বলব, শীতল যুদ্ধের শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে যে শীতল যুদ্ধ, তার শিকার হয়েছেন আপনার বাবা-মায়েরা।
হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, ‘পাকিস্তানকে পশ্চিমের মিত্র হিসেবে দেখা হতো। আমাদের পাকিস্তানকে থামানো প্রয়োজন ছিল, কিন্তু পশ্চিম তা করেনি।’
বাংলাদেশে যে গণহত্যার হয়েছে, সে বিষয়ে বিশ্বব্যাপী এখন আলোচনা হচ্ছে উল্লেখ করে হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউতে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমি মনে করি, এর স্বীকৃতি পেতে শত বছর লাগবে না বা আরও ৫০ বছর লাগবে না। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সামনের কয়েক বছরের মধ্যে পাওয়া যাবে। এর স্বীকৃতি পেতে কয়েক বছর লাগতে পারে, দশক লাগবে না।’
ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, গণহত্যার স্থান পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন উল্লেখ করে হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, ‘বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা যেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়, তার সমর্থনে এসব তথ্য আমরা ইউরোপে নিয়ে যাব।
ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের জন্য স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্যও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। কেবল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই নতুন গণহত্যা বন্ধ করা সম্ভব।’
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের ফ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি হলসø্যাগ বলেন, ‘বাংলাদেশ গণহত্যার কারণে ভুগেছে। স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে তারা আজও ভুগে যাচ্ছে। গণহত্যার বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতির জন্য আমি কাজ করে যাব।’
এ প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে কী ঘটেছে, তা সেই গল্প জানা। এরপর আমাদের দায়িত্ব, বাকি বিশ্বকে বলা যে এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন।’
বিশ্বের সবাই এখানকার গণহত্যা সম্পর্কে জানে না উল্লেখ করে ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, ‘বাংলাদেশে ঘটা গণহত্যা সম্পর্কে জাতিসংঘ জানে। আমরা চাই, গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সঠিক কাজটি করুক।’
নেদারল্যান্ডস ইবিএফের সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যা সম্পর্কে ইউরোপীয়দের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি।’
আগামীকালের সম্মেলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান ইবিএফের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আমরা একাত্তরের চেয়ারপারসন মাহবুব জামান।