Print Date & Time : 9 September 2025 Tuesday 9:09 pm

গত তিন বছর নতুন জাহাজ সংগ্রহ করেনি বিএসসি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: করোনাকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে জাহাজ ভাড়ার মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণের সুবর্ণ সময় চলছে। সময়ের ব্যবধানে তিনগুণ হয়েছে সমুদ্র পরিবহনের ভাড়া, যার প্রতিফলন দেখা গেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়ে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে ১২টি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা থাকলেও গত তিন বছরে নতুন কোনো জাহাজ সংগ্রহ করতে পারেনি বিএসসি। উল্টো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্ঘটনায় পড়ে বহর থেকে একটি জাহাজ কমেছে। অপরদিকে গত তিন বছরে বেসরকারি উদ্যোক্তারা মোট ২৯ নতুন জাহাজ সংগ্রহ করেছেন।

বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশন ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাংলার জয়যাত্রা, বাংলার সমৃদ্ধি ও বাংলার অর্জন এবং ২০১৯ সালের শুরুর দিকে বাংলার অগ্রযাত্রা, বাংলার অগ্রগূত ও বাংলার অগ্রগতি নামে তিনটিসহ দুই বছরে মোট ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করে। এসব জাহাজ পরিচালনা করে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিএসসির মোট আয় হয় ৩২২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালনা আয় ২৭৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাতে আয় ৪৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অন্যদিকে পরিচালনা ব্যয় ১৬০ কোটি ২২ লাখ টাকা, প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় ৬৭ কোটি পাঁচ লাখ টাকাসহ মোট ব্যয় ২২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এতে নিট মুনাফা ৭২ কোটি দুই লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেশি। এর আগের বছর কর সমন্বয়ের পর নিট মুনাফা ছিল ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এবার শেয়ারহোল্ডারদের নিট মুনাফা থেকে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়া হয়। ২০২০ সালে করোনাকাল থেকে এ পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যে জাহাজ ভাড়া তিনগুণ হয়েছে। বিএসসির বহরে জাহাজসংখ্যা বাড়লে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণও বাড়ত, যার প্রতিফলন বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশনের আর্থিক চিত্রে দেখা যায়।

নৌ-বাণিজ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয় সমুদ্রপথে, যার পুরোটাই সম্পন্ন হয় সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে। আর সমুদ্রে পণ্য পরিবহনের সম্ভবনাও ব্যাপক। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ২০২০ সালে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ১৩টি, ২০২১ সালে ১৪টি, ২০২২ সালে (মার্চ পর্যন্ত) দুটি জাহাজসহ মোট ২৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ নামিয়েছে। এ খাতে দেশীয় শিল্পগ্রুপ কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা, আকিজ, বসুন্ধরা, কর্ণফুলীসহ কয়েকটি গ্রুপ ক্রমাগতভাবে বিনিয়োগ বাড়িয়ে যাচ্ছে। সবমিলে এখন ৭৭টি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বহরে যুক্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি জাহাজ নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

বিএসসির কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) এমন বাস্তবতা বিবেচনা করে বছর চারেক আগে মোট ছয়টি এলএনজিবাহী জাহাজ কেনার প্রাথমিক প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার ধারণক্ষমতার দুটি, এক লাখ ৭৪ হাজার কিউবিক মিটারের দুটি এবং এক লাখ ৮০ হাজার কিউবিক মিটারের আরও দুটি এলএনজি জাহাজ বহরে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়। রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে কয়লা পরিবহনে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলার জন্য ৮০ হাজার টনের দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার ক্রয় প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিএসসি।

এছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আমদানিকৃত সব ক্রুড অয়েল বিএসসির নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য এক লাখ থেকে সোয়া এক লাখ টন ধারণক্ষমতার দুটি নতুন মাদার ট্যাংকার ক্রয়-সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আর বিপিসির সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন শীর্ষক প্রকল্প সম্পন্ন হলে আমদানি করা ডিজেল ও জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য দুটি ৮০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার সংগ্রহের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের অনুমোদন এখনও মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পীযূষ দত্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে সংস্থাটির পক্ষে থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আলাপকালে সংস্থাটির সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির শেয়ার বিজকে জানিয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশ এলএনজি যুগে প্রবেশ করেছে। আমরাও এলএনজি জাহাজ সংগ্রহের প্রাথমিক পরিকল্পনা করেছি। এ বিষয়ে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। সভায় একটি কমিটি গঠনও করা হয়। কিন্তু এখনও সেই কমিটির সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানে দেশের বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরন ও সাইজের ৪০-৫০টি জাহাজ থাকা উচিত। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূল কারণে বিশেষ করে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে না পারায় সে পরিমাণ জাহাজ করপোরেশনের বহরে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।’