শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: বাম্পার ফলন হলেও গমের সঠিক দাম না পাওয়ায় হতাশ দেশের অন্যতম গম উৎপাদনকারী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। উৎপাদনে অধিক খরচ করেও লাভ না হওয়ায় তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন গম চাষের প্রতি। তাই কৃষকরা উৎপাদিত গম সরাসরি তাদের কাছ থেকে কেনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, কৃষকেরা গত বছর মৌসুমের শুরুতে গমের ফলন ও দাম কম পাওয়ায় আবাদ কিছুটা কমিয়েছে। এ বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের গমক্ষেত ভালো হয়েছে। তবে এ বছর মৌসুমের শুরুতে গমের নায্য দাম আশা করছেন কৃষকরা। জেলায় এ বছর গমের পাশাপাশি ব্যাপক হারে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ মৌসুমে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩১ হাজার ৫০০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ২২ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরে আবাদ হয়েছিল ৩১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, তিনি গত বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছিলেন। ওই বছর গম মাড়াই করার পর গমের ফলন ও দাম কম পাওয়ায় এ বছর দুই বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছেন। তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতে গমের দাম কম থাকে একই সঙ্গে গমের ফলন ও কম। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ গম ১১৫০ থেকে ১৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা দিয়ে কৃষকের আসল টাকা উঠছেনা। গতবার মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ গম ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। তাই এবার আমরা সরকারের কাছে মৌসুমের শুরুতে গমের নায্যমূল্য প্রাপ্তির আশা করছি। প্রায় পাঁচ বিঘা (২৫০ শতক) জমিতে গম করেছেন সদর উপজেলার চিলারং গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম। তিনি জানান, ফলন ভালো হওয়ার আশা করলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। বর্তমানে কৃষি কাজে সার ও কীটনাশক, হালচাষ, সেচ, কৃষক মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই অনুপাতে কৃষক আবাদকৃত শস্যের নায্যমূল্য না পেলে কৃষকের সংসার চলবে কীভাবে? তাই আমরা সরকারের কাছে আমারে প্রতিটি পণ্যের ন্যায্যমূল্য চাই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গম আবাদ হতো ঠাকুরগাঁওয়ে। গমের চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকছেন। তার পরও কৃষকেরা এবারও গমের ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
