ভারতীয় গরুর ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা থাকলেও সেখানকার সরকারের নীতিগত অবস্থানের কারণে সীমান্ত পার হয়ে গরু আসার চিত্রটি আগের মতো নেই। এ অবস্থায় গত কোরবানির ঈদ আমরা দেশি গরু দিয়েই পালন করেছি। দেশে গরুর মাংসের দাম অবশ্য অনেক বেড়েছে এর মধ্যে। সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করেন, ভারত থেকে গরু না আসায় ঘটেছে এমনটা। তবে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করলে এতে আমাদের লাভের পাল্লাই ভারী। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে এর মধ্যে। দাম বাড়লেও মাংসের ঘাটতি তাই সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
আসন্ন কোরবানির ঈদে ভারত থেকে গরু আসবে না; দেশে উৎপাদিত গরুর ভালো দাম পাওয়া যাবেÑএ আশায় বছরজুড়ে অধিক হারে গরু পালন করেছেন অনেক খামারি। বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল জার্নালিস্টস অ্যান্ড অ্যাক্টিভিস্টস ফেডারেশন আয়োজিত এক সেমিনারে বলা হয়েছে, কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। ভারত থেকে গরু আসার প্রয়োজন এখন নেই। তবে গণমাধ্যমের একাধিক খবরে দেখা যাচ্ছে, শেষ মুহূর্তে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসা শুরু হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে না বা খুব কম আসছেÑএমন খবরও রয়েছে পত্রিকায়। পরস্পরবিরোধী এ ধরনের খবরে সংশয় তৈরি হলেও আমরা চাইব ভারত বা অন্য কোথাও থেকে গরু না আসুক। ভিনদেশি গরুতে পশুর হাট সয়লাব হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে খামারি ও ব্যাপারিরা। আমরা চাই না, মৌসুমি এ পশুর বাজারে এসে বিনিয়োগকারীরা পথে বসুক।
অতিবৃষ্টি ও ঢলে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের অনেক স্থান প্লাবিত হয়েছে ইতোমধ্যে। মধ্যাঞ্চলেও রয়েছে পানির চাপ। বন্যাকবলিত অঞ্চলে পশুখাদ্যের দামও চড়া। গোচারণভূমির অভাব দেখা দেওয়ায় অধিক দামে দানাদার খাদ্য কিনতে হয়েছে খামারিদের। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে কোরবানির জন্য গবাদিপশু তৈরি খাতে বিনিয়োগ করেছিলেন ঋণ নিয়ে। এখন ভালো দামে পশু বিক্রি করতে পারলে বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তার কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন তারা। গরুর অনুপ্রবেশে দেশি গরুর দাম পড়ে গেলে তাদের এ আশাও থাকবে না। ভারত বা পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে বৈধপথে গরু আসার সুযোগ নেই এবং বিশেষত ভারতের সরকারও চায় না বাংলাদেশে গরু আসুক। তাই আমাদের প্রধান গবাদিপশু গরুর পেছনে শুধু খামারি নয়Ñস্থানীয় পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ অফিসও কাজ করেছে বছরজুড়ে, যেন কোরবানিসহ সারা বছরই এখানে পশুর অভাব না হয়। ক্ষতিকর ইনজেকশনের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা না করে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তা বড় করার ক্ষেত্রেও অধিক উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। প্রচেষ্টাটি পুরস্কৃত হওয়া দরকার।
ভারতসহ প্রতিবেশী দেশ থেকে যে গরু আসে, তার একাংশ আটক করে কাস্টমস করিডরের মাধ্যমে বৈধ করার যে পদ্ধতি রয়েছে, তাতে সরকার বড় রাজস্বও লাভ করে না। তাই গরুর অনুপ্রবেশ ঘটতে না দেওয়া খামারি, ব্যাপারিসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই মঙ্গলজনক। প্রাণিসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি আমরা।