গাংনীতে আলুবীজের চড়া মূল্যে চাষিরা দিশাহারা

 

প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর) : মেহেরপুরের গাংনীতে চলতি মৌসুমে আলুর বীজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় আলু চাষে ব্যয় বৃদ্ধিসহ লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। গত বছর বিঘাপ্রতি আলু চাষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও চলতি মৌসুমে খরচ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কার্ডিনাল আলুর বীজের দেখা মিলছে না বাজারে। আর কৃষি বিভাগ বলছে, বতর্মানে আলুর বাজারদর একটু বেশি হওয়ায় বীজের দাম বেড়েছে। উৎপাদন বাড়লেই আলুর দাম কমে যাবে। তা ছাড়া আলুবীজের তেমন কোনো সংকট নেই।

তথ্যমতে, সরকারিভাবে গত বছর কার্ডিনাল ও ডায়মন্ড আলুবীজ ৩০ থেকে ৩২ টাকা এবং এরিস্টন জাতের আলুবীজ বিক্রি হয় ৩৫ টাকা কেজিতে। সেখানে চলতি বছরে কার্ডিনাল ও ডায়মন্ড আলু বীজ সরকারি দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৬ টাকা। আর এরিস্টন জাতের আলুবীজ বিক্রির দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে ডায়মন্ড আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা করে। আর এরিস্টন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা করে। কার্ডিনাল আলুবীজ বিএডিসি কর্তৃক শেষ হওয়ায় বাজারে তার দেখা মিলছে না।

চাষিরা জানান, বিঘাপ্রতি আলুবীজ প্রয়োজন ছয় মণ হারে। দ্রব্যমূল্যের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর দামে বাড়িয়েছেন, যার ফলে বেড়ে গেছে আলুবীজের দাম। অধিক দামে আলুবীজ কিনে চাষ করার পর উৎপাদিত আলু বিক্রির মৌসুমে দাম কমে যায়। ফলে চাষিদের প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হয়।

গাংনীর কাজিপুর গ্রামের কৃষক হাকিম আলী জানান, গত বছর চাষিরা প্রতি কেজি বীজ আলু ক্রয় করেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করে। এ বছর তার দাম বেড়ে হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত বছর লোকসান হয়েছে। এবছর সবকিছুরই দাম বেশি। উৎপাদিত আলু ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পারলে দ্বিগুণ লোকসান হবে। বতর্মানে এক বিঘা আলু চাষ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকার প্রয়োজন, যা সব কৃষকের পক্ষে জোগাড় করা কষ্টসাধ্য।

নওদাপাড়ার কৃষক রাজা জানান, নিম্ন আয়ের মানুষ যেটিই পছন্দ করে বাজারে তারই দাম বেড়ে যায়। চলতি বছরে দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করার জন্য জমি প্রস্তুত করলেও বীজ সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করবেন।

আলুবীজ বিক্রেতা আব্দুল মালেক জানান, ‘এ বছর অবীজ ও বীজ আলু দুই জাতেরই দামই বেশি। গতবার প্রতি কেজি আলুবীজ বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। এবার তার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে অনেক চাষিই আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ভরা মৌসুমে চাষিদের উৎপাদিত আলুর দাম কমে যায়। তাছাড়া আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় চাষিরা বাধ্য হয়ে সব আলু বিক্রি করে দেন।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার মো. সামসুল আলম জানান, চলতি মৌসুমে আলুবীজের দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি, কারণ বাজারে খাওয়ার আলুর দাম বেশি হওয়ায় এমনটি হয়েছে। জেলায় এ বছর ৮৬০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, কৃষকরা যত বেশি আলু চাষ করবে, তত বেশি উৎপাদন বাড়বে। আর উৎপাদন বাড়লেই আমদানিনির্ভরতা কমবে এবং আলুর বাজারদর কমে আসবে। তাই উৎপাদনের বিকল্প নেই।