Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 6:46 am

গাংনীতে কদর বেড়েছে হাতপাখার

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী :সেই আদিকাল থেকেই হাতপাখার কদর ছিল গ্রামগঞ্জে। গরমের ক্লান্তি দূর করার একমাত্র অনুষঙ্গ ছিল হাতপাখা। বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগে সেই হাতপাখা তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছিল। গ্রামে দু-এক বাড়িতে হাতপাখার দেখা মিললেও শহরে হাতপাখা একেবারেই চোখে পড়ত না। প্রচণ্ড দাবদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে শহর ও গ্রামগঞ্জে এখন হাতপাখার কদর বেড়েছে। চাহিদার কারণে মেহেরপুরের গাংনীর বিভিন্ন এলাকার হাটবাজার ছাড়াও বিভিন্ন শপিংমলে বিক্রি হচ্ছে পাখা।

আগে তালগাছের পাতা কেটে গরম পানির স্যাক দিয়ে ভারী বস্তু চাপা দেয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে পাখা তৈরি করত পাখার কারিগররা। এতে লাগত বাঁশের চিকন কাঠি, রং-বেরঙের সুতা ও বাঁশের ডাটি বা হাতল। নববধূরা তাদের স্বামীকে খেতে দিয়ে হাতপাখার বাতাস করত। তাছাড়া গরম থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র হাতপাখা ছিল অবলম্বন। এ হাতপাখা নিয়ে গ্রামগঞ্জে রচিত হয়েছে নানা গীত। আধুনিক যুগে সেসব ঐতিহ্য প্রায় ভুলে গেছে নতুন প্রজš§। তবে অব্যাহত লোডশেডিং আর ভ্যাপসা গরমে প্রাণ ফিরে পেয়েছে হাতপাখা।

গাংনীর হেমায়েতপুর বাজারের কসমেটিক্স ব্যবসায়ী মনোয়ার জানান, দিন ১৫ আগে কয়েকজন হাতপাখা অর্ডার করেছিলেন। সেগুলো বিক্রির পর অনেকেই হাতপাখা কিনতে আগ্রহ দেখালে শুরু হয় নতুন করে পাখা বিক্রি। তালপাখা, সুতির পাখা ছাড়াও প্লাস্টিকের হাতপাখা বিক্রি করা হয়। তালের হাতপাখা আকারভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা, সুতি ও কাপড়ের তৈরি পাখা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আর প্লাস্টিকের পাখার দাম ৩০-৪০ টাকা।

পাখার কারিগর ভাটপাড়ার আক্তার বাঙ্গাল জানান, তার কয়েকজন কর্মচারী আছেন। তারা তালের পাতা সংগ্রহ করেন ও পাখা তৈরি করেন। আর মেয়েরা তৈরি করেন সুতা দিয়ে। এসব পাখা শহর ও গ্রামাঞ্চলে ফেরি করে বিক্রি করে হকাররা। এমনকি ঢাকাতেও পাঠানো হয়। আগে হাতপাখার বিক্রি ছিল খুবই কম, কারণ শুধু নি¤œবিত্ত মানুষই হাতপাখা কিনত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে শহরে হাতপাখা বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। এখন যারা বাড়িতে এসি ব্যবহার করে, তারাও হাতপাখা কিনছে।

বামন্দী বাজারে হাতপাখা কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মেজবাহ উদ্দিন জানান, তিনি গাংনী শহরে বসবাস করেন। তার বাসায় নবজাতক সন্তান। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায়ই তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রচণ্ড গরমে কান্নাকাটি শুরু করে শিশুটি। তাই অন্য কোনো উপায় না পেয়ে হাতপাখা কিনলেন তিনি।

থানাপাড়া এলাকায় বসবাসকারী সালমা বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, এই লোডশেডিংয়ে হাতপাখায় সবচেয়ে বড় ভরসা। ঘরে চার ও এক বছর বয়সী দুটি সন্তান আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা বড়রা ধৈর্য ধরলেও শিশুরা গরমে অস্থির হয়ে ওঠে। তখন নিজে না ঘুমিয়ে হাতপাখা দিয়ে বাচ্চাদের বাতাস করতে থাকি। তাতে নিজের কষ্ট হলেও সন্তানরা অন্তত কিছুটা আরাম পায়।