গাংনীতে বেকারদের আয়ের উৎস বিদেশি পাখি পালন

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর):শৌখিন প্রজাতির বিদেশি পাখি পালন এখন মেহেরপুরের গাংনীর শিক্ষিত ও বেকার যুবকদের আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি চাকরি বা বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করে এরই মধ্যে জেলার কয়েক হাজার যুবক বিদেশি প্রজাতির পাখি পালন করছেন। অনেকেই আবার পাখি পালন সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, শৌখিন প্রজাতির পাখি পালন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম। এ ব্যাপারে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর বন বিভাগ বলছেন, সরকারি বিধি মোতাবেক পাখি পালন করতে হবে।

গাংনী উপজেলার নওপাড়া গ্রামের যুবক পালু মিয়া জানান, শখের বশে বছর পাঁচেক আগে নিজ বাড়িতে কয়েক প্রজাতির শৌখিন পাখি পালন শুরু করেন। কয়েক মাস পর ওই পাখিগুলো ডিম দেয়ার পর বাচ্চা ফোটায়। এভাবে পাখিগুলো বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। এখন তিনি বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন একটি শৌখিন পাখির পারিবারিক খামার। খামারে রয়েছে লাভবার্ড, ককোটেলবার্ড, বাজেরিকা, প্রিন্স বার্ড, ডায়মন্ড ঘুঘু, অস্ট্রেলিয়ার ঘুঘুসহ মোট ১৫ প্রজাতির পাখি।

প্রথমে শখের বশে পাখি পালন শুরু করলেও এখন এটি তার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এলাকায় শৌখিন পাখির চাহিদা থাকায় পাখি বিক্রি করে দেয়া হয়। এলাকায় বিভিন্ন মানুষের কাছে পাখি বিক্রি করে বছরে আয় করেন লক্ষাধিক টাকা। অনেক শিক্ষার্থী পাখি কিনতে আসে। তাদের পাখির পরিবেশ ও খাবার সরবরাহের বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। হাঁস-মুরগি পালনের পাশাপাশি শৌখিন প্রজাতির পাখি পালনও হতে পারে আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম।

শৌখিন খামারি মোস্তাক জানান, স্বল্প জায়গা আর অল্প টাকায় শৌখিন পাখির খামার করা যায়। বাড়ির উঠান কিংবা ছাদের ওপর বিদেশি পাখি পালন করা যায়। ককাটেল জাতের পাখির অনেক দাম এবং চাহিদা অনেক বেশি। এক জোড়া ককাটেল পাখির দাম চার-পাঁচ হাজার টাকা এবং বাজরকা জাতের পাখি বিক্রি হয় ৫০০ টাকা জোড়া। এ প্রজাতির পাখি বছরে চারবার ডিম দেয়। বাণিজ্যিক খামার করতে পারলে মোটা টাকা আয় করা সম্ভব।

কলেজছাত্র সাহারবাটি গ্রামের সুমন আহমেদ জানান, বন্ধুর পরামর্শে তিনি পাখি পালন শুরু করেন। এখন তার বাড়িতে রয়েছে ১০ প্রজাতির পাখি। অনেকেই পাখি দেখেতে আসে। কয়েক প্রজাতির পাখি বছরে তিনবার ডিম দেয়। প্রতিমাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার পাখি বিক্রি হয়। এতে পড়ালেখার খরচ পরিবারের কাছ থেকে নিতে হয় না। উপরন্তু অনেক সময় পরিবারে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারেন।

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, শৌখিন প্রজাতির পাখি পালন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম। এ ব্যাপারে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

জেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা হামিম হায়দার জানান, পাখি পালন করতে হলে সরকারি বিধি মোতাবেক করতে হবে। খামারিদের অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে বিদেশি শৌখিন পাখির সঙ্গে কোনোক্রমেই দেশীয় পাখি পালন বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। এরই মধ্যে শৌখিন পাখি পালনকারীদের লাইসেন্স করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।