প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর) : দুদিন আগেও এক কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। আকস্মিকভাবে সেই বেগুনের কেজি এখন ৯০ টাকা। সব সময় উচ্চমূল্যের তালিকায় নাম লেখানো এই বেগুন এবার সঙ্গে করে নিয়ে গেছে ঝিঙ্গা, কলা, ফুলকপি, কচুসহ প্রায় সব শাকসবজিকে। গত শনিবার থেকে হঠাৎই মেহেরপুরের গাংনীর বাজারে সবজির দর আকাশচুম্বী। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ ক্রেতাদের। অনাবৃষ্টিতে সবজি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং উৎপাদন কমে যাওয়ায় দর বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গত মঙ্গলবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে বেগুন ৯০ টাকা, মুখীকচু ৮৫ টাকা, করলা (উস্তে) ৯০-১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, পালংশাক ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, ঝিঙ্গা ৪০ টাকা, কাঁচকলা ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা ও পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজিতে। শুধু মিষ্টিকুমড়া, পুঁইশাক ও পটোলের দাম রয়েছে ৩০ টাকার মধ্যে। বাকি সব সবজির দর ৬০ টাকার ওপরে।
আকস্মিক এ দর বৃদ্ধিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। গাংনী হাটে সবজি কিনতে এসে জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কৃষক হারান জানান, আলু, পেঁয়াজ, রসুন আর কাঁচা মরিচের দাম বেশ চড়া। এর সঙ্গে সবজির দাম বাড়ায় সবজি কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। হাটের এ মাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত ঘুরেও কাক্সিক্ষত পরিমাণ সবজি কিনতে পারেননি তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী নাজির হোসেন জানান, পেনশনের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে সংসারই চলে না, তার ওপরে সবজির দর যেভাবে বেড়েছে, তাতে সবজি কেনা কষ্টকর। একই কথা জানালেন হাড়াভাঙ্গা গ্রামের জুরাইস। তিনি জানান, সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এভাবে জীবন চলে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
গাংনী কাঁচাবাজারের (পাইকারি আড়ত) আড়তদার সাহাদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে একটানা তাপপ্রবাহ থাকায় সবজির ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তাই যে পরিমাণ সবজির চাহিদা তা বাজারে উঠছে না। ফলে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব ধরনের সবজি এখন দুষ্প্রাপ্য।
সবজি গ্রাম-খ্যাত সাহারবাটির আমিনুর রহমান জানান, বর্ষার সময়ে সব সময় সবজির সংকট হয়। তবে এবারের সংকট খুবই বেশি। অনাবৃষ্টির কারণে পোকামাড়কের আক্রমণ অনেক বেশি, যা সামলাতে গিয়ে সবজি চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু মিলছে না কাক্সিক্ষত ফলন।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান আহমেদ জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবজির উৎপাদন কমে গেছে। তাই বাজারে সবজির চড়া দাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে সবজি উৎপাদনও বেড়ে যাবে। তখন সব ধরনের সবজির দাম থাকবে ক্রেতাদের হাতের নাগালে।