গাংনীর গ্রামে গ্রামে সুপেয় পানির সংকট

প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর): মেহেরপুরের গাংনীর ভোলাডাঙ্গা গ্রামের বিধবা কমলা বেগম। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। চেহারা মলিন। শরীরে নেই আগের মতো শক্তি । এ বয়সে এসে প্রতিদিন কলসি কাঁখে খাবার পানি নিতে ছুটতে হয় গ্রামের মসজিদের ওজুখানায়। অথচ তার বাড়িতেই আছে একটি নলকূপ। নলকূপের পানিকে আর্সেনিক ছাড়াও পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি ওঠাতে বেশ কষ্ট হয় তার। তবুও জীবনের তাগিদে আধা কিলেমিটার দূরে গিয়ে পানি সংগ্রহ করা। শুধু কমলা বেগম নয়, তার মতো গ্রামের সিংহভাগ লোকেরই সুপেয় পানির জন্য ছুটতে হয় মসজিদের ওজুখানা কিংবা মাঠের সেচ কাজে ব্যবহƒত গভীর নলকূপে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এসব বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছর দুয়েক ধরে গাংনীর ভোলাডাঙ্গা, সিন্দুরকৌটা, কুঞ্জনগর, সহড়াবাড়িয়া রায়পুর, শালদহসহ আরও কয়েকটি গ্রামে নলকূপ থেকে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির চাহিদা মেটাতে এলাকাবাসীকে কৃষি জমিতে স্থাপিত গভীর নলকূপের পানি সংগ্রহ করতে দূরদূরান্তে ছুটতে হচ্ছে। আবার যেখানে পানির স্তর ঠিক আছে সেখানকার পানিতে আর্সেনিক। তাই বেশ দূরে গিয়ে আর্সেনিকবিহীন নলকূপ থেকে পানি আনতে হচ্ছে গৃহবধূদের। অনেকেই আবার অন্যের বাড়িতে গিয়ে পানি নেয়াটা পছন্দ করেন না, আবার অনেকেই পানি নিতেও দেন না।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, আগে ভূগর্ভের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরতা থেকেই পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। উপজেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে চার হাজার ৭৯৬টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ৬৭১টি নলকূপ। এছাড়া অনেকেই নলকূপ স্থাপন করেছেন পানির স্তর বিবেচনায়। বিশেষ করে তেরাইল, চাদপুর, কোদাইলকাটি, ভোলাডাঙ্গা ও গাড়াবাড়িয়া এলাকায় পানির স্তর নেমে গেছে। ফলে জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েছে।

উপজেলার কয়েকটি গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। উপজেলার কোদাইলকাটি ও ভোলাডাঙ্গা গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একটি মসজিদের সামনে সুপেয় পানির জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা। ওই মসজিদে একটি গভীর নলকূপ আছে। তারা শুধু খাবারের জন্য কলসিভর্তি পানি সংগ্রহ করতে পারছেন। গোসলসহ নিত্যব্যবহারের জন্য পানি নেয়ার সুযোগ নেই এখান থেকে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েল ও সেচ পাম্পগুলো এখন প্রায় পানিশূন্য। গভীর নলকূপের জন্য আবেদন করেও মিলছে না কোনো সমাধান। পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত এসব এলাকার সাধারণ মানুষ।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার এমরান হোসেন জানান, বৈশ্বিক আবহাওয়ার ফলে মাঠের ইঞ্জিনচালিত পাম্পগুলোতে এখন পানি কম হচ্ছে। আমরা সেচের পানির অভাব দূর করতে সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে জমিতে পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষিপণ্য উৎপাদনে এখন কোনো সমস্যা না হলেও ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি হুমকি বলেও জানান তিনি।

গাংনী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, নলকূপের জন্য অনেক আবেদন জমা রয়েছে, বরাদ্দ কম হওয়ায় এখন আর ব্যক্তিপর্যায়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে না। নলকূপ প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রতিটি মহল্লায় একটি করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে যেখান থেকে আশপাশের পরিবারগুলো পানি সংগ্রহ করবে।