গাজায় ইসরাইলের হামলা অব্যাহত, নিহত বেড়ে ২২০

শেয়ার বিজ ডেস্ক: টানা দশম দিনের মতো গতকালও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত ৬৩ শিশুসহ ২২০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। হানাদারদের বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার অন্তত ৫০টি স্কুল, যার ফলে শিক্ষা জীবন হুমকিতে পড়েছে প্রায় ৪২ হাজার শিশুর। তবে সেখানকার প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ। খবর: রয়টার্স, আল জাজিরা, আরব নিউজ।

সেইভ দ্য সিলড্রেনের তথ্যমতে, ইসরাইলি হামলায় প্রায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দিন কাটছে গাজার ২০ লাখ অধিবাসীর। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে ঠিকঠাক চিকিৎসাসেবা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। ভেঙে পড়েছে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।

গাজার মেয়র ইয়াহিয়া আল-সারাজ বলেছেন, ইসরাইলি হামলায় উপত্যকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় জরুরি অনেক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি অভিযোগ করেছেন, ইসরাইল ইচ্ছা করে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরের পাশাপাশি, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন ও প্রধান প্রধান সড়ক ধ্বংস করে দিচ্ছে।

গাজায় বিদ্যুৎ সংকট নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক লড়াইয়ের কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সংকট এবং ইসরাইলে থেকে আসা ১০টি বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সেখানে দিনে সব মিলিয়ে তিন-চার ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গাজার বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, শহরের ১০টি লাইনের ছয়টিই বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। সীমান্তের কিছু এলাকা একেবারেই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ক্রমাগত হামলার কারণে কর্মীরা সেগুলো সারাতে যেতেও পারছেন না।

রেড ক্রসের মহাপরিচালক রবার্ট মার্দিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজায় বসবাসকারী পরিবার ও আমাদের কর্মীরা বলছেন, তারা ভেঙে পড়ার মুহূর্তে পৌঁছে গেছেন। তারা এক ধরনের জাহান্নামে বসবাস করছেন আর এ সংকট সমাপ্তির কোনো আশা দেখতে পাচ্ছেন না। সেখানে মৌলিক সরবরাহ ও বিদ্যুতের মারাত্মক সংকট চলছে, যা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনছে।

জাতিসংঘের হিসাবে, গাজায় চরম পানি সংকটের কারণে অন্তত চার লাখ ৮০ হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। তাদের অনেকের কাছে পানি পৌঁছাচ্ছে না বললেই চলে।

২৫ মিনিটে ১২২ বোমা নিক্ষেপ গাজায়: এদিকে, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দশম দিনে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিমান থেকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী অর্ধ-শতাধিক বিমান থেকে গাজায় একযোগে মাত্র ২৫ মিনিটে অন্তত ১২২টি বোমা ফেলেছে। এতে গাজা উপত্যকায় অনেক আবাসিক ভবন একেবারে মাটিতে মিশে গেছে।

টানা বিমান হামলার জবাবে গাজা উপত্যকার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন শহরে রকেট নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে।

টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে গাজায় ২৫ মিনিটের এক অভিযানে ১২২টি বোমা ফেলেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর চালানো এই অভিযানে গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে, গতকাল ইসরাইলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হাসাসের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সংঘাত রোধ হামলা অব্যাহত থাকবে। গতকাল তিনি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বলেন, তার দেশ লড়াই থামার কোনো ‘সময়সীমা’ উল্লেখ করবে না। বরং পূর্ণশক্তি নিয়ে হামলা চালিয়ে যাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বনেতারা যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানান।