ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে নিরস্ত্র মানুষ। ইসরাইলীদের বিধ্বংসী বোমা হামলায় কাগজের মতো উড়ছে মানব দেহ আকাশে। এই বিশ্ব কি কখনও এ ধরনের বীভৎস হত্যাকাণ্ড দেখেছে? ইতোপূর্বে এ ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর বুকে ঘটেনি। একে সংঘাত বা যুদ্ধ বলা যায় না এটা এক ধরনের রক্ত পিপাসু খেলা। লোভী উন্মাদ অর্থ পিপাসুরা মানুষের জীবনকে উড়িয়ে দিচ্ছে বোমার আঘাতে। এর মধ্যে লুকায়িত আছে অর্থ লাভের লিপ্সা। মানুষ কতটা জানোয়ার হলে বাণিজ্যর জন্য এ ধরনের খেলা খেলতে পারে তা ভাবলেও শরীর শিহরে ওঠে। এটাই হচ্ছে পুঁজিবাদের আসল খেলা। অর্থের জন্য এরা যা কিছু করার দরকার সবই করতে পারে। গাজায় যা চলছে তা হলো ইহুদি ধর্মপালনকারী মানুষের সঙ্গে ইসলাম ধর্ম পালনকারী মানুষের যুদ্ধ এটা ঠিক, কিন্তু এই যুদ্ধের অন্তরালে ধর্মের বাইরে লুকায়িত আছে বিরাট বাণিজ্য স্বার্থ, যে স্বার্থটাকে ধর্মীয় প্রলেপে ঢাকা হয়েছে কখনও কখনও। এটা যে বাণিজ্যর স্বার্থে যুদ্ধ তা সহজেই অনুমেয়। ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ হলে ইসলাম ধর্মে উৎপত্তিস্থল দেশ সৌদি আরবের ভূমিকাটা কি, মিসরসহ আরব বিশ্ব কি করছে। মূল কলকাটির নায়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না আরব দুনিয়া? আরব দুনিয়া মূলত সাম্রাজ্যবাদীদের তাঁবেদার।
ইসরায়েলে ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে। আর ২০০৭ সাল থেকে অবরুদ্ধ গাজা। ফলে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের জ্বালানি সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। রাজস্ব ও রপ্তানি আয় থেকে বঞ্চিত তারা। দেশটির অর্থনীতি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ এই ইসরায়েলি দখলদারির কারণে ফিলিস্তিনের নাগরিকরা পণ্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে পারে না, সম্পত্তি-সম্পদ ধ্বংস ও বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়; এমনকি ভূমি, পানি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদও হারাতে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজারব্যবস্থাসহ প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তারা বিচ্ছিন্ন।
নিজেদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও নীতির ওপর ফিলিস্তিনদের নিয়ন্ত্রণ খুবই সীমিত। প্যারিস প্রটোকল অন ইকোনমিক রিলেশনস অনুযায়ী ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের মুদ্রানীতি, সীমান্ত ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। আঙ্কটাডের হিসাবে ২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অধিকৃত ফিলিস্তিন বছরে ৪৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আর্থিক রাজস্ব হারিয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলে চলে যাওয়া রাজস্ব ও এর সুদ রয়েছে। গাজায় দীর্ঘস্থায়ী দখলদারির কারণে এখানকার অর্ধেকের বেশি জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দেশটি বছরে ১৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার জিডিপি হারিয়েছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) এক গবেষণায় দেখা গেছে, লেভান্ট বেসিনে নতুন করে গ্যাসের মজুতের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে ১২২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া গেছে। আর উত্তোলনযোগ্য তেলের পরিমাণ ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ব্যারেল হতে পারে। এর মানে ৫২৪ বিলিয়ন ডলারের এ মজুত অঞ্চলটির বিভিন্ন অংশীদারের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে ১৯৯৫ সালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বিতীয় অসলো চুক্তি হয়। চুক্তিটিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সমুদ্রে জলসীমায় উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অধিকার দেয়া আছে। এ চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিন ১৯৯৯ সালে গ্যাস অনুসন্ধানে ব্রিটিশ গ্যাস গ্রুপের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি করে। ওই বছরই ১৭ থেকে ২১ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে গাজা মেরিন নামে বিশাল গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মেলে। তবে এই গ্যাসের বিক্রি নিয়ে ইসরায়েল সরকার, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও ব্রিটিশ গ্যাস কোম্পানির মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হলেও অধিকৃত অঞ্চলে যে রাজস্ব বিধান আছে, সে অনুযায়ী কোনো মুনাফা পায় না ফিলিস্তিন।
গাজাকে অবরুদ্ধ করে রাখার পর থেকে এর প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইসরায়েল। চুক্তিকারী ব্রিটিশ গ্যাসও ফিলিস্তিনকে এড়িয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ইসরায়েল পশ্চিম তীরের ভেতর মেগেদ তেল ও গ্যাসক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিয়েছে। ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি যেসব অঞ্চল দখল হয়ে গেছে, তার তলদেশে এটি। অথচ বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ কোম্পানিকে কিছু বলছে না। ব্রিটিশের কাছে তেল বিক্রির টাকা দিয়ে ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনছে। তাতে দেখাচ্ছে যে, এই যুদ্ধে পরোক্ষভাবে আমেরিকা লাভবান হচ্ছে।
ইসরায়েল অতি সম্প্রতি নিজেদের স্বার্থে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় তেল-গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নকাজ শুরু করেছে। ফিলিস্তিনের তেল ও গ্যাস-সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে অনুসন্ধান চালিয়ে ইসরায়েল হেগ রেগুলেশন, ফোর্থ জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইন ভঙ্গ করছে। এতগুলো আইন ভঙ্গ করার পরও কেন বিশ্বের কথিত বিবেক আমেরিকা নীরব। দখলদারি শক্তিবলে দখলের শিকার লোকজনের স্বার্থ, অধিকার ও অংশীদারত্বের তোয়াক্কা না করে যৌথ সম্পদ অনুসন্ধান এসব আন্তর্জাতিক আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
রয়টার্সের খবরের জানা যায় , ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় গত ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। এতে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে লক্ষাধিক। এরই মধ্যে বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হলেও তাদের বাহিনী গাজায় নিজেদের বানানো বাফার জোন ছাড়বে না। ইসরায়েলি বাহিনী গত মাসে গাজায় নতুন করে অভিযান শুরু করে। তারা ‘নিরাপত্তা অঞ্চলের’ নামে গাজার ভেতরে ঢুকে বিস্তৃত এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে। সেই সঙ্গে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনকে ভূখণ্ডটির দক্ষিণ ও উপকূলরেখা বরাবর ক্রমেই ছোট হয়ে আসা এলাকাগুলোতে ঠেসে দিচ্ছে। গত ১৪ এপ্রিল এ যুদ্ধের দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতারের মাধ্যমে গাজা উপত্যকায় নতুন যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনা দিয়েছে ইসরায়েল, সেখানে উল্লেখ রয়েছে এ নিম্নের বিষয়গুলোর,
ক) প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির প্রথম সপ্তাহে গাজায় বন্দি অবশিষ্ট জিম্মিদের মধ্যে থেকে ১০ জনকে মুক্তি দেবে হামাস, তার পরিবর্তে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থেকে ১২০ জনকে মুক্তি দেবে দেশটির সরকার।
খ) ইসরায়েলি বাহিনী আর গাজা উপত্যকার সব জায়গায় বিচরণ করবে না, বরং ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির আগে গাজার যেসব অঞ্চলে ছাউনি করা হয়েছিল করা হয়েছিল, সেসব ছাউনিতে অবস্থান করবে সেনারা। এছাড়া বিরতি চলাকালে উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মধ্যে চলাচলের জন্য নেতজারিম করিডোর ব্যবহার করতে পারবেন ফিলিস্তিনিরা।
গ) গাজায় ফের ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ এবং বাসভবন ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।
ঘ) গাজায় যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ করার জন্য তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। (এটি যদি ধর্মের জন্য যুদ্ধ হত তাহলে সৌদি আরবের একটা ভূমিকা থাকত)।
ঙ) হামাসকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ পরিত্যাগ করতে হবে এবং গাজায় বর্তমানে কত জন জিম্মি জীবত বা মৃত অবস্থায় আছে, তার সঠিক তথ্য প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে হবে।
ইসরায়েলের নতুন এই প্রস্তবনাটি ইতোমধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের কাছে পাঠানো হয়েছে। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র আবু জুহরি জানিয়েছেন, নতুন প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করছে হামাস। তবে সেখানে হামাসকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়ে দেয়ার যে শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল, তা বাতিল করেছেন গোষ্ঠীর নেতারা। কারণ ইসরাইল তো মার্কিন মদতে তেলের জন্যই হামলা করছে। এটা কার্যত ইহুদি-মুসলিম যুদ্ধ না।
এর আগে, গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দিয়েছিল হামাসও। সেখানে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল যদি গাজা থেকে সব সেনা সরিয়ে নিতে সম্মত হয়, তাহলে হামাসও গাজায় বন্দি সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করে দেবে।
তবে নিরাপত্তার অজুহাতে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি নয় ইসরায়েল। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েলি নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজার পুনর্গঠনে ৮৬০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর সঙ্গে তেল ও গ্যাস থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের ন্যায্য হিস্যা পেলে ফিলিস্তিনকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিনিয়োগের জন্য টেকসই অর্থায়নের সুযোগ দেবে। আর এ বিকল্প খুঁজতে গেলেই হয়তো আরেকটি যুদ্ধ ও সহিংসতা বাধতে পারে। টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও রাজনৈতিক মীমাংসাকে চলতে হয় হাতে হাত ধরে।
আলোচনার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সামগ্রিক শান্তি অর্জন করা সম্ভব বলে জাতিসংঘ এখনও মনে করে। জাতিসংঘ স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, সচ্ছল, সার্বভৌম ক্ষমতা এবং টেকসই রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপনে কাজ করার দরকার। অর্থনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ফিলিস্তিনকে নিজেদের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে হবে। তেল-গ্যাসের ওপর তাদের প্রাপ্ত হিস্যার ন্যায্যতা দিতে হবে।
বাংলাদেশে গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে গত ৭ এপ্রিল সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বগুড়াসহ অন্তত পাঁচটি জেলায় কেএফসি, পিৎজা হাট ও বাটার শোরুমেসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে এগুলোর মালিক ইহুদি। তাই একে ধ্বংস করে দিতে হবে আসলে এটাও ঠিক না। বাংলাদেশে সম্প্রসারিত বাটার বাজার দখল করার জন্য একটি স্বাথান্বেষী মহল গাজার ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে এই হামলাটি করেছে। যাতে বাটার পরিবর্তে নিজেদের পণ্যের বাজার করতে পারে বাংলাদেশকে। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে বাটার বাজার বন্ধ হয়ে গেলে কি ইসরায়েল থেমে যাবে গাজা দখল করা থেকে? গাজার যুদ্ধ বিষয়টি সম্পূর্ণ একটি বাণিজ্যিক খেলা, যে খেলাটির পেছনে লুকায়িত আছে বাণিজ্যিক মুনাফা। এই কোনো ধর্মের জন্য যুদ্ধ নয়, এটা সম্পূর্ণ মুনাফার যুদ্ধ। যত দিন বিশ্বে পুঁজিবাদী মুনাফাখোররা বেচে থাকবে তত দিনই এ ধরনের যুদ্ধ সংঘাত থাকবে, আর এই সংঘাতে প্রলেপ দেয়া হবে ধর্মের। মানবতা বিপন্ন যেকোন মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো উচিত। এটা কেবল ধর্ম দিয়ে বিবেচ্য নয়।
লেখক: উন্নয়নকর্মী, মুক্ত লেখক
কাদিরগঞ্জ দরিখোরবোনা, রাজশাহী।