Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 11:34 am

গাজার সমর্থনে ঢাকায় জনতার স্রোত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর ‘চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদ জানাতে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
দল মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এতে অংশ নেন। ‘মার্চ ফর গাজা’ গণসমাবেশে লাখো মানুষের ঢল নামে।
‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে অংশ নেয় জনতা। কর্মসূচি থেকে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করা, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনায় কর্মসূচিতে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই কর্মসূচি ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে শুরু করেন। এ সময় শাহবাগ ও আশপাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল দুপুরে মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা হয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে দেখা যায়। পিকআপ ভ্যানে করে তরুণদের সেøাগান দিতে দিকে উদ্যানের দিকে যেতেও দেখা যায়। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস-ট্রেনযোগে মানুষ যোগ দিয়েছেন ‘মার্চ ফর গাজা’য়।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন সংগঠন, ইসলামি বক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
গণসমাবেশে অংশ নেন নারী-শিশু-বয়স্করাও। ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ সেøাগানের পাশাপাশি ‘গাজা উই আর উইথ ইউ’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’সহ বিভিন্ন সেøাগান সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন মানুষজন। পাশাপাশি তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে গতকাল বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ‘মার্চ ফর গাজা’র আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ দিন বিকাল প্রায় ৪টার দিকে ফিলিস্তিনের সমর্থনে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ের প্রতি কিছু দাবি জানিয়ে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
একই গণসমাবেশে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল, মত, চিন্তা-দর্শনের মানুষ মজলুম ফিলিস্তিন ও মজলুম গাজার পাশে আছে, সহাবস্থান করছে।
আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা, মতগত পার্থক্য, ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ভূমির অধিকারের দাবিতে আমরা প্রত্যেকটা বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’
সমাবেশে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারি বলেছেন, ‘ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি, কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের হƒদয়ে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন, আমাদের হƒদয়ে বাস করে একেকটা গাজা, আমাদের হƒদয়ে বাস করে একেকটা আল কুদস।’
এই জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন আজহারি। তিনি বলেন, ‘আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, এই গণ জমায়েতে, এই জনতার গণসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, আজকের এই মহাসমুদ্র, জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।’
গণজমায়েতে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। সমাবেশে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিসহ ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষা ও নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে অঞ্চলটিতে চলমান গণহত্যার বিচার দাবি করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। বিএনপির এই প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিলিত হয়।
‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি, হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন নেতা, ইসলামি বক্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষ এই কর্মসূচিতে একাত্মতা জানান।