গাজা শাসন করবে আন্তর্জাতিক প্রশাসন

আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে মিসরের প্রস্তাব

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায় পরিণত করার পরিকল্পনা করছেন। এই পরিকল্পনা মোকাবিলায় মিসর একটি বিকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক একটি প্রশাসনের মাধ্যমে গাজা শাসন করা হবে। অর্থাৎ ফিলিস্তিনের এই অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটির শাসনভার হামাসের থাকবে না; বরং, আরব, মুসলিম ও পশ্চিমা দেশগুলো নিয়ন্ত্রিত অন্তর্বর্তী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। খবর: রয়টার্স।

মিসরের গাজা সংক্রান্ত এ দৃষ্টিভঙ্গি গতকাল মঙ্গলবার আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। তবে এতে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, এ প্রস্তাবটি চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির আগে কার্যকর হবে নাকি পরে। যুদ্ধের পর গাজার শাসনব্যবস্থা কেমন হবে—এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত প্রশ্ন। হামাস এখন পর্যন্ত কোনো বাহ্যিক শক্তির চাপিয়ে দেয়া পরিকল্পনা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কায়রোর প্রস্তাবটি গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন কে করবে বা সেখানকার শাসনব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হবে, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্পষ্ট করেনি। এমনকি শক্তিশালী ও সশস্ত্র হামাসকে কীভাবে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়া হবে, সে বিষয়েও কোনো বিবরণ নেই। জাতিসংঘের হিসাবে, গাজা পুনর্গঠনে ৫৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রয়োজন।

মিসরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গভর্ন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন নামে একটি সংস্থা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য হামাসের জায়গায় গাজা শাসনের জায়গা নেবে এবং এটি অঞ্চলটির মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করবে। প্রস্তবের ভূমিকায় বলা হয়েছে, যদি হামাস গাজার স্থানীয় প্রশাসনের ওপর আধিপত্য বিস্তারকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে থেকে যায়, তাহলে গাজার পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের জন্য কোনো বড় আন্তর্জাতিক অর্থায়ন আসবে না। মিসর, জর্ডান এবং উপসাগরীয় আরব দেশগুলো প্রায় এক মাস ধরে ট্রাম্পের পরিকল্পনার মোকাবিলায় কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। একাধিক বিকল্প পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে, তবে মিসরের প্রস্তাবকেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আরব নেতারা এ প্রস্তাব সমর্থন করবেন কি না—তা রয়টার্স নিশ্চিত করতে পারেনি। কেননা এ পরিকল্পনায় কে ‘গভর্ন্যান্স মিশন’ পরিচালনা করবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে এতে বলা হয়েছে, গাজার পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে গাজার ও অন্যান্য স্থানের ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে। এছাড়া এ পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের গণচ্যুতির কড়া বিরোধিতা করা হয়েছে। মিসর ও জর্ডানের মতো দেশগুলো এটি তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।

হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, তারা মিসরের এমন কোনো প্রস্তাবের কথা জানেন না। তিনি বলেন, গাজার ভবিষ্যৎ কেবল ফিলিস্তিনিরাই নির্ধারণ করবে। হামাস কোনো বাহ্যিক শক্তির চাপিয়ে দেয়া প্রকল্প বা অ-ফিলিস্তিনি প্রশাসন মেনে নেবে না এবং গাজায় কোনো বিদেশি বাহিনীর উপস্থিতিও মেনে নেয়া হবে না। হামাস ২০০৭ সাল থেকে উপকূলীয় গাজা শাসন করছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়, যাতে ১ হাজার ২০০ জনের মতো নিহত হয়। সেদিন থেকে টানা ১৫ মাসের বেশি ইসরায়েল গাজায় হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায়। এতে পুরো গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি ৪৮ হাজারে বেশি মানুষ নিহত হয়, আহত হয় ১ লাখ ১১ হাজারের বেশি। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া, এখনো নিখোঁজ প্রায় ১৪ হাজার। পরে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি এক যুদ্ধবিরতি সাময়িকভাবে সংঘাত থামায়। তবে এ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ গত শনিবার শেষ হয়ে গেছে এবং দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

মিসরের খসড়ায় ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। একইভাবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ও কোনো মন্তব্য করেনি, যদিও যেকোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়নে ইসরায়েলের সম্মতি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।