নজরুল ইসলাম: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নামে তিনটি ব্যাংক হিসাবের পরিচালনাকারী ছিলেন সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান। তার স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে ৭টি চেক ইস্যু দেখানো হয়েছে। ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময়ে চেকগুলোর মাধ্যমে ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম (৫১) তার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক টঙ্গী শাখার হিসাবের অনুকূলে টাকাগুলো জমা ও আত্মসাৎ করেন। তার এ কাজে সহযোগিতা করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাহী (যুগ্ম সচিব) কে এম রাহাতুল ইসলাম (৬১) ও সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ছায়েদুর রহমান (৬১)।
সিটি করপোরেশনের এ তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। উপপরিচালক রাশেদুল ইসলাম গতকাল বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাটি দায়ের করেন। গত ২০ মার্চ মামলাটি দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক কমিশন।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে সাতটি চেকের মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সরকারি তহবিলের ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তারা দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(এ)/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অভিযোগ করা হয়েছে, ঠিকাদার মেসার্স শান্ত শিহাব এন্টারপ্রাইজের পাওনা বিল ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৯৫৩ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু, নথির নোটাংশ পরিবর্তন বা ছিঁড়ে ফেলে পুনরায় পাওনা পরিশোধের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডাচ বাংলা ব্যাংক বোর্ড বাজার শাখার হিসাব থেকে ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৯৫৩ টাকা উত্তোলনের জন্য (চেক নম্বর-৯৯৮২৫৮৯) ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর ইস্যু করা হয়।
ঠিকাদার মেসার্স রক্তিম বিল্ডার্সের পাওনা বিল থেকে ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু, নথির নোটাংশ পরিবর্তন বা ছিঁড়ে ফেলে পুনরায় পাওনা পরিশোধের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডাচ বাংলা ব্যাংক বোর্ড বাজার শাখার হিসাব থেকে ২০ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য (চেক নম্বর ৯৯৮২৬৭২) ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট তারিখে ইস্যু করা হয়।
ঠিকাদার মেসার্স এম এম হক এন্টারপ্রাইজের পাওনা বিল থেকে ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। তারপরও নথির নোটাংশ পরিবর্তন বা ছিঁড়ে ফেলে পুনরায় পাওনা পরিশোধের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডাচ বাংলা ব্যাংক বোর্ড বাজার শাখার হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য (চেক নম্বর ৯৯৮২৭৩৭) ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ইস্যু করা হয়।
ঠিকাদার মেসার্স এমএম হক এন্টারপ্রাইজের পাওনা বিল থেকে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৬১০ টাকা পরিশোধ করা হয়। পরে নথির নোটাংশ পরিবর্তন বা ছিঁড়ে ফেলে পুনরায় পাওনা পরিশোধের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডাচ বাংলা ব্যাংক বোর্ড বাজার শাখার হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য (চেক নম্বর ৯৯৮২৭৪৩) ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর ইস্যু করা হয়।
ঠিকাদার মেসার্স আঙ্গিনা এন্টারপ্রাইজের নিরাপত্তা জামানত বাবদ পাওনা ৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৫ টাকা পরিশোধ করা হয়। নথির নোটাংশ পরিবর্তন বা ছিঁড়ে ফেলে পুনরায় পাওনা পরিশোধের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সোনালী ব্যাংক টঙ্গী বাজার শাখার থেকে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৫ টাকা উত্তোলনের জন্য (চেক নম্বর ৬০৪৫৭২৭) ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট তারিখে ইস্যু করা হয়।
ঠিকাদার মীম কনস্ট্রাকশনের অনুকূলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডাচ বাংলা ব্যাংক বোর্ড বাজার শাখার হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য (চেক নম্বর-৯০১০৬৬৩) ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইস্যু করা হয়। এস এইচ এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক টঙ্গী শাখার হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য (চেক নম্বর-১২৩৪৪২০) ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর ইস্যু দেখানো হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ছায়েদুর রহমান কোনো কিছু যাচাই-বাছাই ছাড়াই পরে সংযোজন করা নোটশিট এবং চেক ইস্যু রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করেছেন। আসামি হিসাবরক্ষণ অফিসার নজরুল ইসলাম তার নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের টঙ্গী শাখার হিসাবে (নম্বর-০৭০৩২০১০০০০৭৭৭০৮) ৭টি চেক জমা করেন। তিনি মোট ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮ টাকা নগদায়ন করে বিভিন্ন সময়ে উত্তোলন করেন। ৭টি চেকে হিসাব পরিচালনাকারী হিসেবে সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রাহাতুল ইসলামের স্বাক্ষর আছে। সাবেক মেয়র মান্নান ৭টি চেকে থাকা স্বাক্ষর তার স্বাক্ষর নয় বলে দাবি করলে বিতর্কিত স্বাক্ষরগুলো হস্তলিপি বিশারদ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বিতর্কিত স্বাক্ষরগুলো ‘স্ক্যান করা জাল’ স্বাক্ষর বলে প্রমাণিত হয়। নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু করার নিয়ম থাকলেও আসামি কে এম রাহাতুল ইসলাম নিয়মবহির্ভূতভাবে আসামি নজরুল ইসলামের নামের হিসাব নম্বরে চেক ইস্যু করিয়ে তাকে ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮ টাকা আতœসাতের সুযোগ করে দিয়েছেন।