মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর : আসন্ন কোরবানির ঈদে ঢাকার গাবতলী হাটে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ বিন্দু হয়ে উঠবে যশোরের আলোচিত ষাঁড় ‘বাংলার বস-৫’। বিশাল আকৃতির এই কালো ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির উচ্চতা প্রায় ৬৫ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ৯৬ ইঞ্চি এবং ওজন প্রায় ৩০ মণ। দাম হাঁকা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।
খামারি আসমত আলী গাইন তার নিজ গ্রামের খামারে ভালোবাসা, যত্ন আর শ্রমে গড়ে তুলেছেন এই দানবাকৃতির ষাঁড়। শুধু বাংলার বস-৫ নয়, আসমতের খামারে রয়েছে আরও ছয়টি বিশাল ষাঁড়, যেগুলো কোরবানির হাট মাতানোর জন্য প্রস্তুত। খামারি আসমত আলী জানান, এবার গাবতলী হাট কাঁপাবে যশোরের ‘বাংলার বস-৫’।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হুরগাতী গ্রামের এই খামারির জীবনের গল্পটি অনুপ্রেরণামূলক। একসময় জীবিকার তাগিদে ঢাকায় রিকশা চালাতেন, বিক্রি করেছেন বাদাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই গরুর প্রতি তার ভালোবাসাই তাকে ফিরিয়ে এনেছে নিজ গ্রামে। সেই ভালোবাসা এখন তাকে গরুর খামারের সফল উদ্যোক্তা বানিয়েছে।
মাত্র দুটি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করা সেই খামারে এখন পালন করেন ৪৫ থেকে ৬০টি গরু। তিনটি শেডে ভাগ করে চলছে পরিচর্যা। বর্তমানে তার খামারে ষাঁড়, গাভি ও বাছুর মিলিয়ে গরুর সংখ্যা প্রায় ২৫টি। দুধ বিক্রির পাশাপাশি কোরবানির বাজারে বড় গরু তুলে আসমত এখন একজন প্রতিষ্ঠিত খামারি।
শুধু আসমত নন, তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমও এই খামার পরিচালনায় অন্যতম ভূমিকা রাখছেন। গরুর গোয়াল পরিষ্কার, খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন-সবকিছুই তিনিই দেখভাল করেন। প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন খরচ হয় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। গরু অসুস্থ হলে আসমত নিজেই চিকিৎসা করেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় আশপাশের অনেক খামারিরা তার পরামর্শ নেন।
আসমতের খামারে প্রতিপালিত ষাঁড়গুলোর নামও যেমন ব্যতিক্রমী, তেমনি আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছে। ‘বাংলার বস’, ‘বাংলার সম্রাট’, ‘জলহস্তী’ নামের এই ষাঁড়গুলো প্রতিবারই গাবতলীর হাটে গিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে। গত বছর ‘বাংলার বস-৪’ বিক্রি হয় ১৫ লাখ টাকায়, যেটি কিনেছিল টাঙ্গাইলের লাবীব গ্রুপ। এবার সেই ধারাবাহিকতায় হাজির হচ্ছে ‘বাংলার বস-৫’।
একসময়ের এক শতক জমির মালিক আসমত এখন ১৭১ শতক জমির গর্বিত মালিক। তবে এতসব অর্জনের পরও কিছু আক্ষেপ রয়েই গেছে। তিনি বলেন, ‘গরুর খামারে এত ষাঁড় থাকার পরও কখনও কোনো প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসে দেখেননি। সরকার যদি আমাদের মতো ক্ষুদ্র খামারিদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে আমরা আরও উন্নত জাতের গরু উৎপাদন করতে পারি, দেশীয় মাংসের চাহিদাও সহজে মেটানো সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উপজেলাটি অনেক বড়। জনবল সংকট থাকায় প্রতিটি খামারে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি খামারিদের পাশে দাঁড়াতে।’
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, এ বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জেলার খামারিরা মোট ১,১৪,৫৭৪টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৩৫,৩৩৮টি, ছাগল ৭৮,৫২৮টি এবং ভেড়া ৫৮৩টি। জেলার পশু চাহিদা ৯৬ হাজার, অতিরিক্ত পশুর সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। ১ জুন গাবতলীর হাটে নিয়ে যাওয়া হবে ‘বাংলার বস-৫’সহ আরও ছয়টি ষাঁড়। প্রত্যাশা, এবারও আগের মতো কাক্সিক্ষত দামেই বিক্রি হবে আসমতের প্রিয় ষাঁড়গুলো।