গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া: স্বস্তি নাকি ভোগান্তির ?

দেশের ২৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সমন্বিতভাবে মাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে পড়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্যই মূলত সূচনা হয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির। এ ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিকে কেন্দ্র হিসেবে বাছাইপূর্বক যেকোনো জায়গায় পড়ার সুযোগ থেকে শুরু করে যাতায়াত খরচ ও সময়, শ্রম লাঘব করার জন্য আপাতদৃষ্টিতে একে শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ক্রমাগত বেশকিছু অপরিকল্পিত ও এলোমেলো পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে ত্রুটিপূর্ণ ভর্তি প্রক্রিয়া এটি, যার জন্য শিক্ষার্থীদের একটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

যথেষ্ট পরিকল্পিত না হওয়ায় গত তিনটি শিক্ষাবর্ষের তিনবারই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় বাছাইয়ের নিয়মের পরিবর্তন করতে দেখা গিয়েছে; তাছাড়া মাইগ্রেশন পদ্ধতিটির সুষ্ঠু পরিচালনার অভাবে এটি দীর্ঘকালীন গড়ায়, ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয় শিক্ষাবর্ষে অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়াসহ সেশনজোটের মতো নানা সমস্যার। আগের নিয়মের বরাবরই ব্যাতিক্রম, ফলে ব্যবস্থা নিয়ে জ্ঞানের সংকীর্ণতা থাকার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে পড়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। নানা সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ও এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। এই গুচ্ছ পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন বর্তমানে একান্ত জরুরি।

সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির পুনর্গঠন করার বিকল্প নেই। আগেই প্রক্রিয়ার সব নিয়মাবলি নীতিমালা আকারে প্রকাশিত করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পথ বিবেচনায় সম্পূর্ণ অবগত থাকতে পারে। মাইগ্রেশন কিংবা অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশে কোনোরূপ বিলম্ব না করে একে আরও দ্রুত অগ্রসর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তি যুদ্ধ একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা; তাই ভর্তি পদ্ধতি পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধাকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষার্থী ভোগান্তির সৃষ্টি হবে এরকম স্বার্থরক্ষামূলক সিদ্ধান্ত হঠাৎই যেন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জোরপূর্বক চাপিয়ে না দিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

যাতায়াত খরচের লাঘব ঘটলেও ভর্তি প্রক্রিয়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীর জন্য এখনও ব্যয়বহুল; তাই আবেদন ফিসহ বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইমূলক ফিগুলোকে পুনরায় বিবেচনায় আনা উচিত। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাত্র ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে তা সব জায়গায়ই সর্বস্তরের মেধার শিক্ষার্থীদের ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাতিষ্ঠানিক অহংকার কিংবা স্বনামধন্য আখ্যায়িত হওয়ার মতো অসুস্থ প্রতিযোগিতাগুলো বন্ধ হবে। সর্বোপরি শুধু ২৪টি নয়—ঢাবি, রাবি, জাবি, চবিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এক ভর্তি পরীক্ষার আওতায় আনার সুষ্ঠু ও পর্যাপ্ত পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের একাধিক ভর্তি পরীক্ষামূলক ভীতি, মানসিক চাপ হ্রাসসহ একটা দীর্ঘকালীন সময় ব্যয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচ বাবদ সমস্যারও দূরীকরণ ঘটাবে।

সামিহা তাসনিম
শিক্ষার্থী, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়