Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 10:20 pm

গুমের আলামত ধ্বংসের বিষয়ে সরকার চক্রান্তের পথে হাঁটছে: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশ ও র‌্যাবপ্রধানসহ সাতজনের ভিসা বাতিল এবং র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর গুমের আলামত ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সম্প্র্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ এবং র‌্যাবপ্রধানসহ সাতজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভিসা বাতিল এবং র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অবৈধ দখলদার সরকার দিশেহারা হয়ে তাদের দ্বারা সংঘটিত গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বাক্ষ্য, প্রমাণ এবং আলামত ধ্বংসের বেআইনি এবং ন্যায়বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অশুভ চক্রান্তের পথে হাঁটা শুরু করেছে। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, গত ১০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ১১টার সময় ২০১৩ সালে গুমের শিকার রাজধানীর সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান সুজনের বাবা আব্দুল জলিল খানের বাড়িতে সবুজবাগ থানার এসআই রবীন্দ্রনাথ সরকার রবীনের নেতৃত্বে ইউনিফর্ম পরা ৮-১০ জন পুলিশ যায়। এ সময় তারা আব্দুল জলিলকে নিজেদের লেখা একটি বক্তব্যে স্বাক্ষর দিতে চাপ দেয় পুলিশ। ওই কাগজে লেখা ছিল সুজন স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে চলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। কিন্তু তিনি ফরমায়েশি বক্তব্যে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ খবর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন। পরে তার হস্তক্ষেপে পুলিশ ফিরে যায়।

তিনি বলেন, একই প্রক্রিয়ায় পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ অন্য পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও একই ধরনের ফরমায়েশি বক্তব্য আদায়ের চেষ্টা করেছে। গুমের সাক্ষ্য এবং আলামত ধ্বংসের এ ধরনের বেআইনি পদক্ষেপ অবৈধ সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা শুধু প্রতিষ্ঠিতই করছে না, এই পদক্ষেপগুলো বর্তমান অবৈধ সরকারকে নিত্যনতুন অপরাধেও সম্পৃক্ত করছে।

তিনি আরও বলেন, গুম-খুনের এ সরকার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করবে। ঘনীভূত গণতন্ত্রের সংকট সৃষ্টির পর গুম-খুনের বিষাক্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিএনপি এ ধরনের বেআইনি ও অশুভ পদক্ষেপের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে সবসময় আছে বলে দ্ব্যর্থহীনভাবে পুনরায় বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করছে। গুমের সঙ্গে সাক্ষ্য ও আলামত ধ্বংস করার অপচেষ্টায় জড়িত সবাইকে আগামীতে আইনের আওতায় আনা এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারকে যথাযথ মূল্যায়ন ও সহায়তা করা হবে বলে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে।

রিজভী বলেন, গোটা বিশ্ব এরই মধ্যে লক্ষ্য করেছে যে, এই অবৈধ সরকার ভোট ডাকাতি, নির্বাচন ব্যবস্থা, গণতন্ত্র-আইনের শাসন, সংবিধান, মানবাধিকার, রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ খুন, গুমের মাধ্যমে নিজেদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্টদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের গুম-খুন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর যুক্তরাজ্য, এইচআরডব্লিউসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তথ্যমন্ত্রী তা তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। মিথ্যা বলা ছাড়া আওয়ামী সরকারের ভাণ্ডারে আর কিছু নেই। রিজভী বলেন, বিএনপি এই অবৈধ ক্ষমতা দখলদার, ফ্যাসিস্ট, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত অবৈধ সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ চায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার চায়, সব খুন- গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের পথকে সুনিশ্চিত করতে চায়। তবে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ গুম-খুনের ঘটনা যতই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করুক, তাতে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে গত ১৩ বছর ধরে গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার হিসাব প্রমাণসহ তাদের কাছে রয়েছে।