গুম বিষয়ে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করা হবে : আইন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : গুমবিষয়ক একটি আইন আগামী এক মাসের মধ্যে হবে। এ আইনের অধীনে একটি শক্তিশালী গুমবিষয়ক কমিশন গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সচিবালয়ে জাতিসংঘের বলপ্রয়োগে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে গুম সম্পর্কিত কার্যনির্বাহী দলের সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

আইন করলে পরবর্তী সরকার আইনটি বাতিল করবে কি নাÑজানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা যে সরকারই আসুক তারা সবাই গুমের শিকার। তারা সবাই সোচ্চার ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত সবচেয়ে বেশি শিকার ছিলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে তারা বারবার বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। ১২ বছর আগে আসতে চেয়েছিল। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারাই (সরকারের লোকজন) গুমের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছিল বলে আমাদের বিশ্বাস। সে জন্য তারা জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি, তাদের চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সরকারের একটা কমিটমেন্ট ছিল গুমের তদন্ত, গুমের বিচার। জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে এসেছে, তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। মিটিংয়ে বসার পর তারা আমাদের কিছু কার্যক্রমের প্রশংসা করেছে। গুম কমিশনের, তদন্ত কমিশনের প্রশংসা করেছে, আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছি সেটার প্রশংসা করেছে। গুমবিষয়ক কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছে। আমরা এই জিনিসটা প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করব।’

আমি এটাও বলেছি, গুমবিষয়ক যে আইন করব সেখানে খুব শক্তিশালী একটা কমিশনের ইচ্ছা রাখি, সেটা জানিয়েছি। উনারা গুমের শিকার পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন, মিসিং পারসন সার্টিফিকেট দিতে বলেছেন, সেটা আমাদের আইনে রয়েছে। তারা একটা সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলেছেন। আইনের বিষয়ে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা দেবেনÑজানান আইন উপদেষ্টা।

সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এবং ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন হচ্ছে কি নাÑজানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এটা দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়েছিল এবং সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলেছিল। এই কমিশন শ্রীলঙ্কা এবং নেপালেও হয়েছে। কিন্তু অতটা সাকসেসফুল হয়নি।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের চারটি অংশ থাকে। একটা হচ্ছে ট্রুথ সিকিংÑআসলে কী হয়েছিল সেটা। সেটার কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি যে রিপোর্টটা করল সেটা এটার একটা পার্ট। আমাদের ট্রাইব্যুনালে যে বিচার হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, সেটা ট্রুথ সিকিংয়ের একটা পার্ট। আমাদের মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সাবেক গণভবনে যে জুলাই জাদুঘর করছেন, সেটা ট্রুথ সিকিংয়ের একটা পার্ট। তারপর একটা পার্ট হচ্ছে-মেমোরিয়ালাইজেশন, স্মৃতিটাকে ধরে রাখা। সেটা ফারুকীর জাদুঘরের মাধ্যমে নিশ্চয়ই করা হবে।

আর তৃতীয় হচ্ছে অ্যামনেস্টি, এটা একটু কঠিন। এটা হচ্ছে যারা ছোট ছোট অপরাধে যুক্ত ছিলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো অপরাধে যুক্ত ছিলেন না, তাদের ক্ষেত্রে কোনো অ্যাননেস্টের স্কোপ আছে কি না সেটা দেখা। সব দেশেই এটা করা হয়। চতুর্থ ধাপ হচ্ছে রিকনসিলিয়েশন। চরম যারা দোষী আছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে আমাদের একটা জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। আরেকটি হচ্ছে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া। ক্ষতিপূরণ শুধু টাকার অঙ্কে না। হয়তো ধরুন, জুলাই অবস্থানে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করাÑযোগ করেন আইন উপদেষ্টা।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক মিটিং করেছিলাম। আমাদের দ্বিতীয় ধাপে চিন্তা আছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে রিজোনাল কনফারেন্স করব। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকার যারা আছে তাদের আনব। আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, মানবাধিকার গ্রুপ আছে, ছাত্ররা আছেÑসবার মতামত নিয়ে কী করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করব।’