গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুম ছাড়া চট্টগ্রামে বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুম ছাড়া শ্রমিককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করার ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন। পুলিশ স্বীকার করেছে ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুম ছাড়া তারা শ্রমিকের ওপর গুলি করেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বীকার করার রেকর্ড আছে। পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে একটি সিন্ডিকেট বাহিনীও গুলি করেছে। শ্রমিকদের নির্যাতন নিপীড়ন করছে। ওই সিন্ডিকেট বাহিনীকে খুঁজে বের করতে হবে।’

বাঁশখালীর গণ্ডামারা এলাকায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও খাদ্য সহায়তা প্রদানকালে গতকাল ডা. জাফরুল্লাহ এ কথা বলেন। তার নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি টিম গতকাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় পৌঁছে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে দিতে হবে, কারণ নিহত ১৮ বছরের শ্রমিকরা আরও ৪০ বছর বেঁচে থাকত। বেঁচে থাকলে বহু আয়-রোজগার করত। কয়লা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কিছুই নয়।’

বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের উদ্যোগে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে গত ১৭ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে নিহত গণ্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনার মাহমুদ রেজার বাড়িতে গতকাল বিকাল ৫টায় ডা. জাফরুল্লাহ এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার পুলিশের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই পুলিশ প্রকৃত ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলতে পারছে না। সরকার ১২ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তা গণ্ডামারায় ভেসে উঠেছে। এত বড় প্রকল্প অথচ গণ্ডামারায় রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি গণ্ডামারার বেহাল রাস্তাঘাটে প্রকাশ পাচ্ছে।’

সেখানে বক্তব্য দেয়ার আগে তিনি বেলা ৩টায় বাঁশখালীর গণ্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় যান। বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের দক্ষিণ প্রান্তের সড়ক পথ থেকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ তার সঙ্গে যাওয়া ৮ সদস্যের টিমসহ ওখানে প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী মো. ফারুক ও বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবিরের সঙ্গে কথা বলেন। বিকাল ৪টায় পুলিশের গুলিতে নিহত বাঁশখালীর পূর্ব বড়ঘোনার মাওলানা আবু ছিদ্দিকির ছেলে মাহমুদ রেজার (১৯) বাড়িতে যান। সেখানে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং নিহতের কবর জিয়ারত করেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পক্ষ থেকে ২০০ জন হতদরিদ্র পরিবারকে এ সময় ত্রাণ দেয়া হয়।

প্রকল্পে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে ঢুকতে বাধা দেয়নি। আমি স্বেচ্ছায় যায়নি। আমি শান্তি চাই, সংঘাত নয়। যেভাবেই হোক উন্নয়ন হলেই হলো। তবে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় বিচার হওয়া জরুরি।’

গণ্ডামারায় তার সঙ্গে আরও ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।