দেশে প্রতিদিন কী পরিমাণ গ্যাস অপচয় হচ্ছে, তা উঠে এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ‘এনার্জি সিকিউরিটি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। এর তথ্যমতে, আবাসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দৈনিক সরবরাহ করা গ্যাসের ১৬ শতাংশই অপচয় হচ্ছে বিভিন্নভাবে। কী কারণে এবং কোন খাতে কতটুকু গ্যাস অপচয় হচ্ছে, তারও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। গতকালের শেয়ার বিজের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পড়ে মনে হচ্ছে, দেশে জ্বালানি সংকট বাড়লেও গ্যাস ব্যবহারে আমরা এখনও উদাসীন। অপচয় রোধ করতে না পারলে এ প্রাকৃতিক সম্পদের মজুত যে অনুমান করা সময়ের অনেক আগেই শেষ হয়ে যাবে, তা অনেকের জানা। বস্তুত গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টিতে নানা প্রচার ও পদক্ষেপ আমরা আগেও দেখেছি। তাতে যে খুব একটা কাজ হয়নি, উল্লিখিত প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্যগুলো তার প্রমাণ।
আমরা মনে করি, দেশীয় ব্যবহারকারীদের গ্যাস ব্যবহারের এ চিত্র উদ্বেগজনক। শুধু জ্বালানি নয়, যে কোনো সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রেই এমন অপচয় কাম্য নয়। এটি রোধে সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপই প্রত্যাশিত। আমরা দেখেছি, গ্যাসের মতো জ্বালানির সদ্ব্যবহারে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এমন পদক্ষেপ তার আন্তরিকতাই প্রমাণ করে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ গ্যাস অপচয় হচ্ছে, এর ৩১ শতাংশই শিল্প-কারখানায়। শিল্প খাতের তালিকায় আবার উপরের দিকে রয়েছে টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট। অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে শিল্প খাতও প্রসার লাভ করছে। এ অবস্থায় খাতটিতে গ্যাসের অপচয় রোধে পদক্ষেপহীন থাকলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার যে আন্তরিকতা দেখিয়েছে, তা খুব কাজে আসবে না। এজন্য আমরা চাইবো, গ্যাসনির্ভর কারখানায় এর ব্যবহার তদারক করা হোক। প্রযুক্তিগত কারণে যেখানে প্রয়োজনের বেশি গ্যাস খরচ হচ্ছে, তাদের বাধ্য করা হোক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে আর উদাসীনতা কিংবা অবহেলার ক্ষেত্রে নেওয়া হোক আইনি ব্যবস্থা।
গবেষক ইজাজ হোসেন জানিয়েছেন, জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বেসরকারি খাতে অল্প কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এটা আশার সংবাদ। এ খাতে দক্ষতা ব্যাপকভাবে বাড়লে গ্যাস অপচয় রোধে তা দৃশ্যমান পরিবর্তন আনবে বলেই প্রত্যাশা। আমরা চাই, একে উৎসাহ জোগাতে সরকারও এগিয়ে আসুক। এতে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার বাড়বে। তার বক্তব্য থেকে আরও জানা যায়, সরকারি খাতের দক্ষতা উন্নয়নে বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমরা জানতে চাইবো, সরকারি খাতে এক্ষেত্রে ঠিক কী কারণে উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাস অপচয়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা একেবারেই বেখবর, নাকি জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারে তারা উদাসীন? বস্তুত গ্যাস অপচয় রোধে বেসরকারি খাতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা সরকারি খাতে শুরু করতে না পারলে এর দায়ও সরকার এড়াতে পারবে না।
আমাদের গ্যাসের মজুত সীমিত এবং দ্রুতই তা ফুরিয়ে আসছে। দেশীয় মজুত শেষ হয়ে গেলে চাহিদা পূরণে নির্ভর করতে হবে আমদানির ওপর। জানা যায়, আমদানি করা গ্যাসের দামও হবে বেশি। সম্প্রতি সরকার জ্বালানির দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার পেছনে এটা ছিল অন্যতম যুক্তি। গ্যাস ব্যবহারে অভ্যাসের ইতিবাচক পরিবর্তন ও অদক্ষতা কমানো না গেলে অপচয় ঠেকানো যাবে না বলেই শঙ্কা। তাই বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও এ প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এজন্য যে নীতিগত সিদ্ধান্ত ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন, তার সহজ ও সুলভ জোগানের ব্যবস্থাও আমরা চাইবো।