নিজস্ব প্রতিবেদক: আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাত ব্যতীত অন্য সব খাতে গড়ে গ্যাসের দাম ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির আবেদন করেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। সে সঙ্গে বিতরণ চার্জ ৮৪ শতাংশ বাড়িয়ে ঘনমিটার প্রতি ২৫ পয়সা থেকে এক টাকা পাঁচ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কর্ণফুলীর প্রস্তাবে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য সর্বনি¤œ ২৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৭২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম তিন দশমিক ১৬ টাকা থেকে ২০৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ টাকা, সারে দুই দশমিক ৭১ টাকা থেকে ৩৭২ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ দশমকি ৮০ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯ দশমিক ৬২ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬
টাকা, শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বর্তমান মূল্য সাত দশমিক ৭৬ টাকা থেকে ৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ টাকা এবং চা-বাগানে গ্যাসের বর্তমান মূল্য সাত টাকা ৪২ পয়সা থেকে ৭৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ টাকা ৮২ পয়সা করার প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়।
বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চলমান গণশুনানির তৃতীয় দিনে গতকাল কমিশনের কাছে মূল্য বৃদ্ধির এসব প্রস্তাব তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি।
গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য আবদুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান, রহমান মুর্শেদ ও মাহমুদ-উল হক ভুঁইয়া। এছাড়া কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, কর্ণফুলী গ্যাস, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পেট্রোবাংলা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারাও উপস্থিত আছেন।
যদিও কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি কর্ণফুলীর প্রস্তাব যাচাই-বাচাই করে গ্যাসের বিতরণ চার্জ বাড়ানোর বিপরীতে ঘনমিটার প্রতি পাঁচ পয়সা কমিয়ে বর্তমান ২৪ দশমিক ৮৯ পয়সার বদলে ১৯ দশমিক ৮৮ পয়সা করার সুপারিশ করেছে।
বিতরণ চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাবে কর্ণফুলী গ্যাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ও সার শ্রেণিতে বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধি করলেও ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি, গৃহস্থালি, শিল্প, বাণিজ্যিক ও চা-বাগান শ্রেণিতে উল্লেখযোগ্য হারে বিতরণ মার্জিন কমানো হয়। ফলে ২০১৫-১৬ ও পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে কোম্পানির মুনাফা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে।
আরও বলা হয়, অর্থ আইন ২০১৫-এর বিধান অনুযায়ী গ্রাহক কর্তৃক গ্যাসবিল পরিশোধকালে তিন শতাংশ হারে উৎসে আয় কর্তনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ হতে গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎসে আয়কর কর্তনের হার তিন শতাংশ নির্ধারণ করায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে উৎসে আয়কর কর্তনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে বিতরণ মার্জিন হ্রাসের ফলে কোম্পানির করপূর্ব মুনাফার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে।
আর এসব যুক্তির বিপরীতে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, কর্ণফুলী গ্যাসের রেট বেজের ওপর রিটার্ন বিবেচনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিট রাজস্ব চাহিদা ইউনিট প্রতি ১৯ দশমিক ৮৮ পয়সা, বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ২৪ দশমিক ৮৯ পয়সা।
মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, গ্রাহকের প্রকৃত গ্যাস ব্যবহার মোতাবেক বিল প্রণয়ন নিশ্চিত করার স্বার্থে সব গ্রাহক শ্রেণির মিনিমাম চার্জ প্রত্যাহার করে ফিক্স কস্টের একটি অংশ গ্রাহকের অনুমোদিত লোডের ভিত্তিতে ডিমান্ড বা ফিক্সড চার্জ হিসেবে রিকোভার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি বিদ্যমান বিতরণ চার্জ সমপরিমাণ হারে হ্রাস করা যেতে পারে।
এদিকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার আগে এলএনজির দোহাই দিয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অযৌক্তিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। তাই তিনি গ্যাসের মূল্য না বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর ভূঁইয়া বলেন, সিএনজির দাম ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব একেবারেই যুক্তিহীন। তিনি বলেন, সিএনজির মূল্য বাড়ানো হলে তা সমাজের সব শ্রেণির মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাবে যা সাধারণ মানুষের জন্য অস্বস্তির কারণ হবে।

Print Date & Time : 31 July 2025 Thursday 4:45 am
গ্যাসের মূল্য ৭৫% ও বিতরণ চার্জ ৮৪% বৃদ্ধির প্রস্তাব
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: