গ্যাস-জ্বালানিতে ভর্তুকি কমছে, বাড়ছে কৃষি ও খাদ্য খাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী অর্থবছরের বাজেটে কৃষি ও খাদ্য খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ছে। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে কমানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভর্তুকি ও
প্রণোদনায় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা থাকছে নতুন বাজেটে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় এক লাখ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এক লাখ ১৪ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের কয়েকটি বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। এবার এর ব্যতিক্রম হচ্ছে।

চলতি বাজেটে কৃষি ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় ১৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে তা ২০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে। এ বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই সারে ভর্তুকি বাবদ দেয়া হয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হলো, বর্তমান বিশ্বে চলমান যুদ্ধবিগ্রহ, ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়া ও জোগান ঘাটতির কারণে বাণিজ্যে স্থবিরতা রয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট এবং খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই স্থানীয় পর্যায়ে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে বাড়তি নজর দেয়া হবে।

চলতি বাজেটে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সহায়তায় ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বেড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির ফলে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে টিসিবির জন্য আগামী বাজেটেও রাখা হচ্ছে ১৯ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। তবে আগের অর্থবছরের বকেয়া পরিশোধ করার ফলে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৬২ হাজার করা হয়। চলতি অর্থবছর বকেয়ার প্রায় পুরোটাই পরিশোধের পাশাপাশি এ খাতের সিস্টেম লস কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে বিদ্যুতে ভর্তুকি কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার। তাই নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।

জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাবদ চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয় ৭ হাজার কোটি টাকা। এ খাতের বরাদ্দ মূলত এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করা হয়। সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহে অতিরিক্ত চার কার্গো এলএনজি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ কারণে সংশোধিত বাজেটে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাড়িয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ছয় হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি কমানো হলে দাম বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে মানুষের উদ্বেগ থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই এসবের দাম বাড়ানো হবে না। সিস্টেম লস কমানোর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলন বাড়িয়েই ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ থাকবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে যেভাবেই হোক, জ্বালানি নিশ্চিত করা হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে না। ‘সিস্টেম লস’ কমিয়ে ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।

জানা গেছে, গ্যাস সংকট কাটাতে বাপেক্সকে অন্তত পাঁচটি কূপ খননের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এজন্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো গেলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের ভর্তুকিতে লাগাম টানার উদ্যোগ ইতিবাচক। শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি ও খাদ্য খাতে ভর্তুকি এবং বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সার, বীজ, সেচ সুবিধা, কৃষিঋণ এবং আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ক্রয়ে আরও বেশি সহায়তা পাবেন কৃষকরা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি অপরিহার্য। কৃষকদের উৎসাহিত করতে এবং তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে সরকার এ খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং দেশে খাদ্যঘাটতির ঝুঁকি কমাবে। এটি দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।