গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত মুন্নু সিরামিকের

নাজমুল ইসলাম ফারুক, ধামরাই থেকে ফিরে: দেশ-বিদেশে মুন্নু সিরামিকের চাহিদা ও খ্যাতি দুই-ই আছে। কিন্তু চাহিদা থাকলেও বর্তমানে কোম্পানিটি পণ্য জোগান দিতে পারছে না। ফলে হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পথে অনেক গ্রাহক। গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এভাবে চলতে থাকলে বছর শেষে কোম্পানির টার্নওভারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এছাড়া হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিয়েও রয়েছে দুশ্চিন্তা। এসব কারণে উদ্বিগ্ন রয়েছেন কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাও।

এদিকে উৎপাদন কমলেও মুন্নু সিরামিকের শেয়ারের দরে গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে বেশ উল্লম্ফন দেখা গেছে। পরবর্তী সময়ে দর আবার নেমে যায়। গতকাল মঙ্গলবারও মুন্নু সিরামিকের শেয়ারে নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত ছিল।

এ সম্পর্কে কোম্পানি সচিব বিনয় পাল (চলতি দায়িত্বে) শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘদিনের। তবু কোম্পানিটি তার সুনাম ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কয়েক দিন পর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করা হবে। সেই আর্থিক প্রতিবেদন দেখলেই বোঝা যাবে কোম্পানির অবস্থা কী।’

কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্র্রতি আয় হয়েছে মাত্র দুই পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল সাত পয়সা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১২ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২২ পয়সা। অর্থাৎ গত এক বছরের ব্যবধানে ইপিএস প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি নেমেছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বছর শেষে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ধামরাই থানার ইসলামপুরে মুন্নু সিরামিকের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের সংখ্যা খুবই কম। কারখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, একসময় এ কারখানা প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। বর্তমানে এর সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় এক হাজারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, আগের চেয়ে উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে। দু-তিন বছর ধরে গ্যাস সংকট। তবে আগে তা কম থাকলেও তিন মাস ধরে সংকট বাড়ছে। গ্যাস সংকট থাকায় শ্রমিকদের কাজ দেওয়া যায়নি। কাজ কম থাকলেও মাসের পর মাস তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে। কাজ না থাকায় অনেক শ্রমিকই চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। যেসব শ্রমিক বর্তমানে রয়েছেন তারা বর্তমানে এক শিফটে কাজ করতে পারছেন। অথচ একসময় এ কারখানায় তিন থেকে চার শিফটে পণ্য উৎপাদন করা হতো। বর্তমানে এক শিফটে কাজ চলছে।

তারা আরও জানান, প্রতিদিন ৭০ হাজার পিস সিরামিক পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে পুরো ইউনিটগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না।  আগে ১০ থেকে ২০ শতাংশ উৎপাদন কম হলেও বর্তমানে তা প্রায় ৩০ শতাংশ কমছে।

কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, মুন্নু সিরামিকের পণ্যের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এ কোম্পানির পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্ডার আসার পর দেরিতে পণ্য সরবরাহ করা হয়। কোনো কোনো দেশের অর্ডার পাওয়ার প্রায় তিন থেকে চার মাস পর পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়।

তাছাড়া দেশি মার্কেটেও এ পণ্যের চাহিদা রয়েছে। দেশি গ্রাহকদের বেশ অর্ডার থাকলেও তা সময়মতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

এদিকে উৎপাদন বিঘ্ন ঘটলেও কোম্পানির শেয়ারদর গত আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে বাড়তে থাকে। ওই সময় কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৪২ টাকা ৬০ পয়সা। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৬০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার ৭০ টাকা বা ১৬৪ শতাংশ বেড়েছে।

কোম্পানির লভ্যাংশ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১১ সালের পর থেকে কোম্পানিটি পাঁচ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা দুই কোটি ৩৯ লাখ ২৮ হাজার ২০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৬১ দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শূন্য দশমিক শূন্য চার শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।