Print Date & Time : 16 July 2025 Wednesday 11:02 pm

গ্যাস সংকট চলবে আরও কয়েক দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজানের প্রথম দিন রাজধানীর অনেক বাসায় জ্বলেনি চুলা। কোথাও কোথাও চুলা জ্বললেও গ্যাসের চাপ ছিল খুবই কম, যা দিয়ে রান্না করা সম্ভব ছিল না। গতকালও একই অবস্থা ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। হঠাৎ করেই এমন সমস্যার ফলে অনেক বাসা-বাড়িতে গতকালও তৈরি হয়নি ইফতারি। এ গ্যাস সংকট কাটিয়ে উঠতে আরও কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্যাস সরবরাহ সমস্যা সমাধান হতে আরও কয়েকদিন অর্থাৎ ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

এদিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জানিয়েছে, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে কিছু কিছু গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে। ফলে কোনো কোনো এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আশা করা যাচ্ছে।

অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেশকিছু এলাকার গ্রাহকরা গ্যাস সংকটে পড়েছেন। অনাকাক্সিক্ষত এ ভোগান্তির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বিবিয়ানা অন্যতম। সেই ক্ষেত্রের ছয়টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগানের সংকট তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকায়। সংকট কাটিয়ে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিবিয়ানার ছয়টি কূপ থেকে গত শনিবার রাতে গ্যাস উত্তোলনের সময় বালি উঠতে শুরু করে। এ কারণে গ্যাস উত্তোলন কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। ওই রাতেই প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়ে সরবরাহ ব্যবস্থায়।

রাজধানীর আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, কাফরুল, আদাবর, বনশ্রী, রামপুরা, আজিমপুর, লালবাগ, ধামমন্ডি, সিদ্ধেশ্বরী, কাঁঠালবাগান, মিরপুর, ক্রিসেন্ট রোড, জিগাতলা, শ্যামলী, কল্যাণপুর, এলিফ্যান্ট রোড, গ্রিন রোড, মতিঝিল, সেগুনবাগিচা, নারিন্দা, মিরপুর ১, ২ ও ১০ নম্বর এলাকায় গতকালও গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিবিয়ানার কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনের সময় বালি উঠতে শুরু করে। এ কারণে বন্ধ করে দিতে হয় উৎপাদন। এতে রাতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। আবাসিক এলাকায় সাধারণত প্রায় ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এখন সরবরাহ হচ্ছে প্রায় ১৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

তিনি বলেন, কূপ মেরামত করতে কিছুটা সময় লাগবে, ফলে কিছুটা ঘাটতি থেকে যাবে। ৮ এপ্রিল আমাদের একটি এলএনজির কার্গো পৌঁছাবে। এরপর ১০ এপ্রিল নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।

রমজানে এমন গ্যাস সংকটের বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। গ্রিন রোডের বাসিন্দা খাদিজাতুর তৌহুরা নামের এক গৃহিণী বলেন, মাস গেলেই নিয়মিত গ্যাসের বিল দিতে হয়। কিন্তু প্রায় গ্যাসের চাপ থাকে না। এর মধ্যে প্রথম রমজান, কিন্তু বাসায় ইফতারি বানাতে পারিনি। সব বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। রমজান মাসে গ্যাসের সংকটে যে আমাদের কত বড় সমস্যা হয় একথা বোঝানো যাবে না। আজও গ্যাস সংকট, বলতে গেলে গ্যাসের কোনো চাপই নেই।

মোহম্মাদপুর এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, আমার বাসায় সকালের দিকে গ্যাস চলে যায়, পরে ইফতারের কিছু আগে গ্যাস এলেও চাপ ছিল খুব কম। যা দিয়ে কোনো কিছু রান্না করা সম্ভব হয়নি। আজও গ্যাসের চাপ কম। রমজানের দ্বিতীয় দিনেও বাইরে থেকে কিনে এনে খেতে হয় আমাদের।

এদিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য হ্রাসকৃত হারে গ্যাস সরবরাহের কারণে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে।