Print Date & Time : 7 August 2025 Thursday 12:13 am

গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে দ্রুত উদ্যোগ নিন

ঘূর্ণিঝড় মোখা মূল আঘাত হেনেছে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রের একটি অংশ বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ওপর দিয়ে গেছে। সাগর থেকে স্থলভাগে এসে মোখা অনেকটা দুর্বল হওয়ায় দেশে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মোখার আঘাতে ক্ষতি দৃশ্যমান না হলেও এর অভিঘাতে কিন্তু কম ক্ষতি হয়নি। গতকাল শেয়ার বিজ কড়চায় ‘মোখায় এলএনজি সরবরাহ বন্ধ: গ্যাস সংকটে ২৯২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের রেকর্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনেই বোঝা যাচ্ছে পরোক্ষ ক্ষতি কম হয়নি। মোখার প্রভাবে শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকেই কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান দুটি টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এতে পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়, যার প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এক দিনের ব্যবধানে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমেছে ১৬৪ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট)। এতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে এক হাজার ৪৫৭ মেগাওয়াট। ফলে সর্বোচ্চ লোডশেডিংয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়।

এদিকে গ্যাস সরবরাহ কমার প্রভাব সরাসরি পড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, শুক্রবার সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল রাত ৯টায় ১৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। পরদিন রাত ৯টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৩৪৯ মেগাওয়াট।

গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়নি, আবার গ্যাসনির্ভর শিল্পেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। কেবল চট্টগ্রাম অঞ্চলেই গ্যাসনির্ভর সাতটি ইস্পাত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব কারখানা চালু আছে, সেগুলোয়ও আংশিক উৎপাদন হচ্ছে। গ্যাসনির্ভর আরেকটি শিল্প হলো কাচ। কাচশিল্পে চুল্লিতে এক হাজার ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাঁচামাল গলিয়ে উৎপাদন করা হয়। এজন্য এ শিল্পের অপরিহার্য উপাদান গ্যাস। কোনো কারণে গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে চুল্লি ধ্বংস হয়ে যায়।

ভারী শিল্প তো বটেই, অন্য শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ দরকার। রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, দুটি ভাসমান টার্মিনালের মধ্যে একটি গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। সেটি থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হতে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। আর যেটি কাছাকাছি আছে, তা থেকে শিগগিরই এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে। এতে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

গ্যাসের অভাবে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার গ্যাস না থাকায় গাড়ি চলাচলও কমে গেছে। অন্যদিকে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের কর্মস্থলে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন মালিকেরা। মোখার  প্রভাবে বড় দুর্যোগ না হওয়ায় পোশাক কারখানা গতকালই খোলার কথা ছিল। কিন্তু গ্যাসের অভাবে ডায়িং, বয়লার, ওয়াশিং ও ফিনিশিং শাখা চালু করা যাচ্ছে না। দুর্যোগ হলে বিদেশি ক্রেতারা ছাড় দিতেন। এখন যেহেতু দুর্যোগের শঙ্কা কেটে গেছে, তাই বিদেশিরা ভাবছেনÑকারখানা চালু হয়েছে, ফলে ছাড় দেয়ার কথা ভাবাই না। হয়তো সময় বাড়িয়ে নেয়া যাবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কেজিডিসিএল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে ছয় থেকে সাত দিন লাগতে পারে। এলএনজি টার্মিনাল চালু না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা থাকবে। রপ্তানি যাতে ব্যাহত না হয়, সে লক্ষ্যে দ্রুত গ্যাস সরবরাহের সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে  হবে।